এখনো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়: কামাল আহমেদ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, এখনো সাংবাদিকরা গালাগালির শিকার হচ্ছেন, অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ন্যায্য পারিশ্রমিক ও নীতিগত সহায়তা সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জরুরি। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম উভয়ে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে।
 
রোববার (৪ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুইডেন দূতাবাস।

সেমিনারে কামাল আহমেদ বলেন, অনেকে বলছেন যে, সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে, তা অবাস্তব। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম লাভ করতে পারছে না বা রুগ্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব গণমাধ্যম কোম্পানির মধ্যে যাদের হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে, তার আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক, যা প্রমাণ করে- এ ধরনের রূপান্তর মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, মূল সমস্যা হলো বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যেনতেনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা বিভিন্ন স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। পাঠক বা শ্রোতার আকৃষ্ট করতে না পারলেও তারা টিকে থাকার চেষ্টায় বিজ্ঞাপনের দরে অস্বাভাবিক হারে ছাড় দিয়ে পুরো খাতের ক্ষতি করছে।

কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ ও সাংবাদিকদের ওপর বেশিরভাগ হামলার পেছনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি এবং কথিত মব ভায়োলেন্স কাজ করছে। সরকারের এগুলো কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না।

অনলাইনে ভুল তথ্য ও প্রপাগান্ডা মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস। তিনি বলেন, এখনো গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, তারা অনেক প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে ফিল্টারিং করছেন, এখনো মুক্তভাবে কাজ করতে পারছেন না।

গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের কিছুটা এগিয়ে আসা ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে নারীদের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া মানবাধিকার নিশ্চিত করা যাবে না বলেও মনে করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, যখন সাংবাদিকের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তার সঙ্গে সাধারণ জনগণও বাকস্বাধীনতা হারায়।

বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এর সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ১৬ ধাপ এগোনোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, কথা বলার অবস্থা ছিল না। মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আমরা ১৬ ধাপ এগিয়েছি। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে ৩২ ধাপ পেছাবো না, এ নিশ্চয়তা কে দেবে।

এ. কে. আজাদ বলেন, প্রেস কাউন্সিল একটি পঙ্গু ও প্যারালাইজড অর্গানাইজেশন। এর কোনো ভূমিকা নেই। সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, আপনার আমার নিরাপত্তা দেবে কে? একজন সাংবাদিক অপরাধ করলে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে মারা যেতে হবে কেন। মুশতাক আহমেদকে (কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদ) কেন জীবন দিতে হয়েছে? কী অপরাধ ছিল তার? এটি নিয়ে কেউ কখনো কথা বলেছি? কথা বলার অবস্থা ছিল না।

নোয়াব সভাপতি আরও বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতার পর দেখেছি, কোনো সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে ফাংশন করতে পারেনি। অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এই ১৬ শতাংশ অগ্রগতি আগামী দিনে ৩২ শতাংশ পিছিয়ে যাবে না, তার কোনো গ্যারান্টি আমরা দিতে পারবো?

সরকারের ‘সিক্রেট এজেন্সিস’ খবরে হস্তক্ষেপ করে অভিযোগ করে এ কে আজাদ বলেন, মফস্বল সাংবাদিকরা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে সাংবাদিকতা করে। সমকালের দুই মফস্বল সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এএফপির ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজয়ানুল হক রাজা। সেমিনার সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘রামায়ণ’ দেখে কৌশল পাল্টাল ‘গড অব ওয়ার’ নির্মাতারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জকে সঙ্গে নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়বো: তাসনিম জারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জে আ.লীগ-ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী Jul 16, 2025
img
নিজ বাড়ি থেকে তারকা দম্পতির মরদেহ উদ্ধার Jul 16, 2025
img
বিশ্ব বাজারে বেড়েছে ডলারের মান ও ট্রেজারি বন্ডের সুদহার Jul 16, 2025
img
কিছু কিছু ম্যাচ সারা জীবন মনে থাকে: মোহাম্মদ সিরাজ Jul 16, 2025
img
ঘুষ দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় এয়ারপোর্টে দুই বাংলাদেশি আটক Jul 16, 2025
img
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Jul 16, 2025
img
অভিনেতা রবি তেজার বাবা আর নেই Jul 16, 2025
img
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে রেখে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় : বিআরটিএ চেয়ারম্যান Jul 16, 2025
img
বিসিবি এবার টাইগারদের জন্য নিয়োগ দিল ‘পাওয়ার হিটিং’-এর জনক Jul 16, 2025
img
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের সময়সূচি ঘোষণা Jul 16, 2025
img
ওমান সাগরে ২০ লাখ লিটার তেলসহ ট্যাংকার জব্দ করলো ইরান Jul 16, 2025
img
ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও দাম কমাতে কাজ করছে সরকার: ফয়েজ আহমদ Jul 16, 2025
img
বিমানবন্দরের মারাত্মক ভুলে করাচির যাত্রী পৌঁছে গেলেন সৌদি Jul 16, 2025
img
কন্যাসন্তান পেয়ে জীবন বদলে গেল: সিদ্ধার্থ Jul 16, 2025
img
র‍্যান্ডম পদ্ধতিতে ১৫ হাজার ৪৯৪টি আয়কর রিটার্ন অডিটে এনবিআরের নির্বাচন Jul 16, 2025
img
‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ তিন তারকাই এখন কন্যার বাবা-মা Jul 16, 2025
img
বিনোদিনী চরিত্রেই নিজেকে খুঁজে পেলেন শুভশ্রী Jul 16, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে ইরানকে আগস্ট পর্যন্ত আলটিমেটাম Jul 16, 2025