হজ ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ নেতা তসলিম

শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা যুবলীগ নেতা এম শাহাদাত হোসেন তসলিম এবারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। তার নিয়ন্ত্রণেই থাকছে হজের ফ্লাইট।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে ৬ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক সভাপতির দায়িত্বে থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিজের ‘ডাইন্যাস্টি’ ট্রাভেলের মাধ্যমে তিনি সৌদির বেসরকারি বিমান সংস্থার জিএসএর (জেনারেল সেলস এজেন্ট) দায়িত্ব নেন।

এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে তিনি হজযাত্রীদের নিম্নমানের বিমান সেবা দেওয়া, ফ্লাইনাস এয়ালাইন্সের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে পে-অর্ডার না করে তিনি নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যইে সব আর্র্থিক লেনদেন করা ও প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে অর্ধলাখের বেশি কমিশন বাগিয়ে  নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

৫ আগস্টের পর থেকে তসলিম পলাতক রয়েছেন। তার অধীনে থাকা ফ্লাইনাসের জিএসএ বাতিল করে বেঙ্গল এয়ারলিপ্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে জিএসএ অনুমোদন দেয় সৌদি আরব। তবে, তার বিরুদ্ধে গোপনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা ও সৌদির সঙ্গে সমাঝোতা করে ফের ফ্লাইনাসের জিএসএ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে হাবের কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে হাবের বর্তমান কমিটি একটি ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে। তসলিমের বিরুদ্ধে ‘আল রশিদ ফাউন্ডেশনে’র নামে সরকারের কাছ থেকে প্লট বাগিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সিন্ডিকেটেরও তিনি অন্যতম সদস্য।

তসলিম সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে হজ প্যাকেজের মূল্য। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজে যেতে পারছেন না। হজের নির্ধারিত কোটাও পূরণ হচ্ছে না। ৩ বছর ধরে সৌদি আরবে নির্ধারিত হজের কোটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, হজ ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একক আধিপত্য তৈরি করেন তসলিম। গড়ে তুলেন দুর্ভেদ্য কঠিন সিন্ডিকেট। নিয়ম না মেনে টানা চতুর্থবারের মতো তিনি হাবের সভাপতি হন। এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ান হজের বিমান ভাড়াও।

বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও তার গঠিত ‘সিন্ডিকেট’ এখনো সক্রিয়। হাবের নতুন কমিটিতেও তার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। তিনি রাজধানীর গুলশানেই অবস্থান করছেন বলে অনেকে দাবি করেছেন।

জানা যায়, তসলিম ২০২২ সালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সৌদির ফ্লাইনাস বিমান সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের হজযাত্রী পরিবহণের অনুমতি নেন। ২০২৩ সালে ফ্লাইনাস হজযাত্রী পরিবহণ শুরু করার পর থেকেই হজের বিমান ভাড়া এক লাফে ৫৮ হাজার টাকা বেড়ে যায়। হজ ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য।

হজযাত্রী পরিবহণে আরও (বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স) দুই বিমান সংস্থা রয়েছে। ফ্লাইনাসের বিমানগুলো নিম্নমানের হওয়ায় এর ভাড়া অন্য দুই বিমান সংস্থার ভাড়ার চেয়ে অনেক কম। এরপরও তসলিম প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে জাতীয় বিমানের সমপরিমাণ ভাড়া আদায় করতেন।

হাবের এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, যুবলীগ নেতা তসলিমের সিন্ডিকেটের লোকজন বর্তমানের হাব দখল করে আছেন। তিনি হাবের দায়িত্ব পালনের সময় আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দেননি। যদিও প্রতিবছর হাবের প্রায় আড়াই কোটি টাকার মতো আয় রয়েছে।

ফ্লাইনাসের জিএসএ নিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকা প্রফিট করেছেন। এছাড়া তিনি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। সবমিলিয়ে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

নানা অভিযোগের জবাবে হাবের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তসলিম গণমাধ্যমকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। বর্তমানে ‘ডাইন্যাস্টি’ ট্রাভেল এজেন্সির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব মেজবাহ উদ্দিন সাঈদকে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের সবকিছু দেখাশোনা করছেন।

এছাড়া তিনি জামায়াতের রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তা এক ধরনের গল্প কাহিনী। এর কোনো সত্যতা নেই। হাবের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, হাবের টাকা এককভাবে আমার ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আল রশিদ ফাউন্ডেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের নামে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোও সত্য নয়।

হাবের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, হাবের বিগত ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো আয় হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময় দায়িত্বে ছিলেন এম শাহাদাত হোসেন তসলিম। বিগত এই ৬ বছরে আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমে এই আয়-ব্যয়ের কি অবস্থা জানা যাবে।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ: আলী রীয়াজ Jul 21, 2025
img
সালমান, আনিসুলসহ নতুন মামলায় গ্রেফতার ৭ জন Jul 21, 2025
img
ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই: ফরিদা আখতার Jul 21, 2025
শুল্কের দাপটে বিপদে রপ্তানি খাত, সরকারের ব্যর্থ দরকষাকষি! Jul 21, 2025
যা যা থাকছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়ায় Jul 21, 2025
স্বামীর গায়ে হাত তুললেন সোনাক্ষী! ভিডিও ভাইরাল Jul 21, 2025
শুধু অভিনেত্রী নয়, ভালোবাসার নাম ছিল শেফালী,পরাগের শোকবার্তা Jul 21, 2025
img
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জরুরি নির্দেশনা মাউশির Jul 21, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৬০২ জন Jul 21, 2025
img
রেখার ‘সতিন’ হতে চেয়েছিলেন অন্য এক অভিনেত্রী Jul 21, 2025
img
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা Jul 21, 2025
img
কে সেই নায়ক? বলিউড পার্টিতে টাবুকে জোর করে চুমু খেয়েছিলেন Jul 21, 2025
img
গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দিল আদালত Jul 21, 2025
img
নভেম্বর পর্যন্ত সারের ঘাটতি হবে না : কৃষি উপদেষ্টা Jul 21, 2025
img
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে প্রতারণা করছেন আপনারা: ব্যারিস্টার সুমন Jul 21, 2025
img
সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেই জুলাই সনদ : আলী রীয়াজ Jul 21, 2025
img
ভুটান লিগে প্রথমবারের মতো খেলতে গেলেন দুই ফরোয়ার্ড তহুরা ও শামসুন্নাহার Jul 21, 2025
img
বিতর্কিত ৩ নির্বাচন : ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য নিচ্ছে ইসি Jul 21, 2025
img
সিদ্ধার্থ-কিয়ারার সন্তানের সঙ্গে সালমানের ছবি ঘিরে তোলপাড় Jul 21, 2025
img
আইসিসির সদস্যপদ পেল আরও নতুন ২ দেশ Jul 21, 2025