অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে, সাজানো হচ্ছে ‘ফিরোজা’র আঙিনা

চারমাসের মতো সময় দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কয়েক বছর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর গুলশানের ‘ফিরোজা’ আর এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা যাওয়া ছিলো সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। তবে এবার লম্বা সময় থাকতে হয়েছে দেশের বাইরে। ফলে গুলশানের বাসাতে বিরাজ করেছে শুনশান নীরবতা।

মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফিরোজায় ফিরবেন খালেদা জিয়া।

সোমবার (৫ মে) লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৪টায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন খালেদা জিয়া।

ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। বাড়ির সামনের সবুজ আঙিনা সাজানো হয়েছে ফুল গাছের টব দিয়ে। ভেতরের কক্ষগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সব কিছু তদারকি করছেন। এখন আমরা সবাই ম্যাডামের অপেক্ষায় আছি।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর কাতার রয়েল অ্যাম্বুলেন্সের বিমানযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। আমরা আশা করছি, তিনি সময়মতো পৌঁছাবেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে জিয়া পরিবারের দু্ই সদস্য তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি ঢাকায় আসছেন। জুবাইদা রহমান তার বাবার বাসা ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবনে’ উঠবেন বলে জানা গেছে। ছোট পুত্রবধূ ফিরোজাতেই থাকবেন।

নেতাকর্মীদের অপেক্ষা, আছে ভোগান্তির শঙ্কা

এদিকে দলীয় প্রধানের সুস্থ হয়ে দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। যে কারণে তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে কর্মদিবসে দিনের প্রথম প্রহরে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী উপস্থিত হলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যে কারণে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় ভিড় না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর।

অন্যদিকে আগামীকাল সড়কে ভোগান্তির বিষয়টি চিন্তা করে নগরবাসীর উদ্দেশে ১০টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে বার্তা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের তরফ থেকে একটা আবেদন আছে যে, কাল এসএসসি পরীক্ষা আছে। যেহেতু ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাকলী দিয়ে ম্যাডাম গুলশানের বাসায় যাবেন। আমি সকলকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতাকর্মীরা যাতে জাতীয় ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানায় আমরা এমন নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন রাখতে চাই, কেউ যেন রাস্তায় না দাঁড়ান, ট্রাফিক বিঘ্নিত না করেন, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে যেতে যেন বাধার সম্মুখীন না হয় সেই ব্যাপারে সকলকে নজর রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে কোনো অসুবিধা না হয়।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিএনপির চেয়ারপাসন ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এতে তার বিদেশ যাওয়ার পথ সুগম হয়।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকার নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা আব্বাস Jul 07, 2025
img
সাড়া দেয়নি ইউরোপ, সেপ্টেম্বরে এশিয়ার কোন দেশের বিরুদ্ধে খেলবে হোমজারা? Jul 07, 2025
img
ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থেই দুদকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে: আহমদ তৈয়্যব Jul 07, 2025
img
রণবীর সিং-কে নিয়ে এক দশক পর ফিরছে ডন সিরিজ Jul 07, 2025
img
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ Jul 07, 2025
img
গত ১৭ বছরে পিওনের চাকরিতেও এমপি-মন্ত্রীদের ডিও লেটার লেগেছে: ফয়েজ আহম্মদ Jul 07, 2025
img
রাজধানীর বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন ঠেকাতে আবেদন Jul 07, 2025
ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব –নাটোরে নাহিদ Jul 07, 2025
রাজউকের অভিযানে স্থানীয়র বাধা; পরে যা জানা গেলো... Jul 07, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে যারা এগিয়ে Jul 07, 2025
img
‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করতে ১০ বছরের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে’ Jul 07, 2025
img
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সাথে হেফাজত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 07, 2025
img
রিয়েল এস্টেট সংস্থার হয়ে প্রচারের কারণে মহেশ বাবুকে আইনি নোটিশ Jul 07, 2025
সাংবাদিক পরিচয়ে এরা কারা? Jul 07, 2025
আয়না ঘরে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন: ছাত্রদল নেতার বিবরণ! Jul 07, 2025
জুলাই নিয়ে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতভেদ Jul 07, 2025
img
জীবনসঙ্গীকে অবশ্যই ফেমিনিস্ট হতে হবে : বাঁধন Jul 07, 2025
img
মঙ্গলবার ইরান থেকে ফিরবেন আরও ৩২ জন Jul 07, 2025
img
ইনজুরির কারণে বাংলাদেশ সিরিজে থাকছেন না হারিস রউফ! Jul 07, 2025
রেজিষ্ট্রেশনের চিঠি বাতিল করতে ইউনানী চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশ! Jul 07, 2025