“ভুলে গেলে চলবে না, আমার বয়স ৪৩…”, কথা প্রসঙ্গে মাহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই বললেন। শুনে সঞ্চালক দিপ দাস গুপ্ত বেশ এক চোট হেসে বললেন, “আমি কিন্তু এই প্রসঙ্গ তুলিনি…!” ধোনির অবসর বা বিদায়ের সম্ভাব্য সময়কালের ব্যাপারটি এতটাই স্পর্শকাতর যে, সবাই প্রসঙ্গটি তোলার ক্ষেত্রে সাবধানী। চেন্নাই সুপার কিংসের মহানায়ক এবার নিজেই জানালেন, বিদায় নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।
আইপিএলে বুধবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ শেষে নিজের এই ভাবনা জানার ধোনি। মৌসুমজুড়ে ধুঁকতে থাকা চেন্নাই এ দিন শেষ ওভারে জিতেছে দুই উইকেটে। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা দলটির যা ১২ ম্যাচে স্রেফ তৃতীয় জয়।
ক্যারিয়ারের আরও অনেক ম্যাচের মতো এখানেও শেষ সময়ে ক্রিজে ছিলেন ধোনি। যদিও অতি সাবধানী ব্যাটিংয়ে কাজ একটু কঠিন করে ফেলেছিলেন তিনি। যে ম্যাচটি শেষ করা যেত একটু আগেই, সেই ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভারে। চেন্নাইয়ের প্রয়োজন পড়ে ছয় বলে আট রানের। উইকেট বাকি দুটি।
ধোনি তখন খেলছেন ১৫ বলে ১০ রান করে। ছিল না কোনো বাউন্ডারি। শেষ ওভারের প্রথম বলটি ইয়র্কারের চেষ্টায় লো ফুল টস করে বসেন আন্দ্রে রাসেল। ধোনির ভেতরের সেই ফিনিশার সত্তা জেগে ওঠে। চাবুকের মতো চালিয়ে দেন ব্যাট। বল আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে।
পরের বলে সিঙ্গল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি ধোনি। তৃতীয় বলে দুই রান নেওয়ার চেষ্টা করলেও সিঙ্গলের বেশি নিতে পারেননি। স্ট্রাইকে তখন দশ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান আনশুল কাম্বোজ। খেলা তখন জমে ওঠার ইঙ্গিত। তবে চতুর্থ বলটি মিড অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে চার মেরে দেন কাম্বোজ। গ্যালারি থেকে ভেসে আসে উল্লাসের আওয়াজ।
খেলা যদিও কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে, তার পরও গ্যালারিতে ছিল হলুদ জার্সি হলুদ পতাকার ছড়াছড়ি। কারণটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না!
ধোনির জন্য চেন্নাইয়ের এমন সমর্থন থাকে আইপিএলের প্রায় প্রতিটি মাঠেই। টসের সময় যখন সঞ্চালক রাভি শাস্ত্রির সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক, গর্জন ভেসে এলো গ্যালারি থেকে। শাস্ত্রি সেদিকে ইশারা করে বললেন, ‘এটা চেন্নাই নয়, কলকাতা… তার পরও মনে হচ্ছে যেন আপনার ঘরের মাঠ…!”
ধোনি বললেন, এই শহর ও এই মাঠ তার অনেক আপন।
“বেড়ে ওঠার সময়টায় অনেক ক্রিকেট খেলেছি এখানে আমি। অনূর্ধ্ব-১৬, অনূধর্ব-১৯, ক্লাব ক্রিকেট, পূর্বাঞ্চলের হওয়ায় আঞ্চলিক ক্রিকেট… যে পরিমাণের ক্রিকেট এখানে খেলেছি, এটা ঘরের মাঠের মতোই।”
“অনেক অনেক খেলেছি, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, আঞ্চলিক ক্রিকেট, রাঞ্জি ট্রফির ম্যাচ… এমনকি অনেক একদিনের ম্যাচের ভেন্যুও ছিল এটা। অফিস লিগ এবং আরও অনেক ক্রিকেট খেলেছি। শুধু ইডেন গার্ডেন্সেই নয়, চারপাশের অনেক জায়গায় খেলেছি এই শহরে।”
এই শহর ও এই মাঠের দর্শকেরা তাকে কতটা ভালোবাসে, সেটির প্রমাণ দেখা গেছে ম্যাচজুড়েই। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে সঞ্চালক ও বাংলারই সাবেক ক্রিকেটার দিপ দাস গুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন সেই প্রবল দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে। ধোনি নিজেই তখন তুলে আনলেন শেষবেলার প্রসঙ্গ।
“এরকম ভালোবাসা ও অনুরাগ আমি পেয়ে আসছি বরাবরই। ভুলে গেলে চলবে না, আমার বয়স ৪৩… অনেক দিন ধরেই খেলছি (হাসি)। আমি এটুকু বুঝতে পারি যে, তারা (ভক্তরা) ঠিক জানেন না, কোনটি আমার শেষ মৌসুম হয়ে যাবে। এজন্য তারা মাঠে এসে আমাকে সমর্থন দেয়, আমার খেলা দেখতে চায়…।”
দিপ দাস গুপ্ত তখন হাসতে হাসতে বললেন, “আমি কিন্তু এই প্রসঙ্গ (বিদায়ের) তুলিনি… আপনিই বললেন…!”
ধোনি এরপরই জানালেন, তার শেষের সিদ্ধান্ত তোলা আছে সময়ের হাতে।
“এটা তো সত্যি কথা দিপ, কারণ আমি বছরে স্রেফ দুই মাসই খেলি। এবারও আইপিএল শেষ হয়ে আবার ছয় থেকে আট মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হবে স্রেফ এটুকু দেখার জন্য যে, আমার শরীর এই ধরনের চাপ ও অন্য সবকিছু সহ্য করতে পারে কি না।”
“এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কিছু হয়নি আমার। তবে যেখানেই যাই, সবার ভালোবাসা ও মায়ার ছোঁয়া অনুভব করি, এটা দারুণ।”
ধোনি যখন এসব বলছেন, এর ঠিক দুই মাস পরই তার বয়স হবে ৪৪। চেন্নাই যদিও দাকে ছাড়তে চায়নি কখনোই। বরং তার জন্য এবার আইপিএল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে পুরোনো একটি নিয়ম ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি, যেখানে ধোনিকে তারা ধরে রাখতে পেরেছে ‘আনক্যাপপ’ ক্রিকেটার হিসেবে। অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় চোটের কারণে ছিটকে পড়ার পর সাত ম্যাচ ধরে দলকে আবার নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনিই।