পারভেজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যে দুই তরুণীর নাম উঠে এসেছিল, তাদের খুঁজে বের করতে আদালত ২৩ এপ্রিল নির্দেশ দেয়।
সে নির্দেশনার পর আলোচিত ওই দুই ছাত্রীর একজনকে পারভেজ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে ঢাকার ভাটারা থানাধীন নর্দা এলাকা থেকে ফারিয়া হক টিনা নামে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষবর্থীকে গ্রেফতার করা হয় বলে বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হল।"
পারভেজকে হত্যার ঘটনায় নাম আসা দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে গত ২৩ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এর ১৫ দিন পর এক তরুণীকে গ্রেফতারের কথা জানাল পুলিশ।
পারভেজ হত্যা মামলায় গত ২৩ এপ্রিল রাতে গাইবান্ধা থেকে প্রধান আসামি মেহরাজকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে হৃদয় মিয়াজীকে ২১ এপ্রিল কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। রিমান্ড শেষে তারা কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে গ্রেফতার মাহাথির হাসান ও মো. আল কামাল শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতার আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানিও রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
ঢাকার বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ১৯ এপ্রিল টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে তার মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর আটজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেহরাজ ও তার সঙ্গীরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে পারভেজের ওপর হামলা চালায়।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকানে খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিলেন পারভেজ। সেসময় তাদের পেছনে অন্য প্রতিষ্ঠানের দুজন ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একপর্যায়ে মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজসহ তিনজন এসে পারভেজের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চান। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
পরে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক এসে দুই পক্ষকে প্রক্টরের রুমে ডেকে নিয়ে মীমাংসা করে দিলে মেহরাজসহ তার সঙ্গীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরে আসামিরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ধাওয়া করে পারভেজ ও তার বন্ধু তারিকুল ইসলামকে মারধর এবং পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করে।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, “মেহরাজ ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তার বুকের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে।”
মামলার আজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। তাদের ছাড়াও নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে হৃদয় মিয়াজী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষারও এ হত্যা মামলার আসামি।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন; ছাত্রদল ‘মিথ্যাচার’ করছে।
আরএ/টিএ