শাশুড়ির নির্যাতনে পুত্রবধূর আত্মহত্যা চেষ্টা, সইতে না পেরে নিজেকেই শেষ করেন পলাশ

আলোচিত র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহননের পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার স্ত্রীকে দায়ী করে দেওয়া হয়েছে একের পর স্ট্যাটাস। তবে ফরিদপুরে পলাশের শ্বশুরবাড়ি ও প্রতিবেশীরা জানালেন ভিন্নকথা। ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা ভরত সাহা (৬২)। তার ২০ বছর বয়সি একমাত্র কন্যা সুস্মিতা সাহার দুই বছর আগে বিয়ে হয় পলাশের সঙ্গে।

শুক্রবার ( ৯ মে ) বিকালে মেয়ে জামাইয়ের জন্য বিলাপ করছেন শ্বশুর ভরত সাহা। তিনি বলছেন, তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসত পলাশ, নিজের হাতে খাইয়ে দিত, সময় পেলে বেড়াতে নিয়ে যেত, যেটা সহ্য হতো না পলাশের মায়ের।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় লোকের সঙ্গে মেয়ে দিতে চাইনি, ছেলে অনেক শখ করে আমার মেয়েটাকে একরকম জোর করেই নিয়েছে। ছেলের আগ্রহ দেখেই আমরা শেষপর্যন্ত মেয়েটাকে দিয়েছি; কিন্তু আমার মেয়ে তার শাশুড়ির অত্যাচারে স্বামীকে বাঁচাতে পারল না।

মেয়েটা আমার কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গেছে, এখন আমি ভয় পাচ্ছি মেয়েটা নিজেকে না শেষ করে দেয়।’

সুস্মিতার চাচাতো ভাই ব্যাংকার পার্থ সাহা জানান, ১৮ বছর হওয়ার পর আমার বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় পলাশ। পলাশের আগ্রহ দেখে আমরা বোনকে দেই; কিন্তু বিয়ের পর কোনোদিন ওদের বাড়ি আমরা যেতে পারিনি, সব সময় শুনতাম বোনটাকে ওরা যৌতুকের জন্য অত্যাচার করত; কিন্তু পলাশের কথা সব সময় শুনেছি ভালো, সে আমার বোনকে অনেক ভালোবাসত।

সুস্মিতাদের প্রতিবেশী গৃহবধূ দীপা সরকার জানালেন, তিন দিন আগে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। সুস্মিতা বলেছিল ডাল রান্না খুব ভালো হওয়ায় তার প্রশংসা করেছিল পলাশ, সঙ্গে সঙ্গে খাবার টেবিলেই তার শাশুড়ি আরতি সাহা ডালের বাঁটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। সেদিন রাতেই সুইসাইডের জন্য পদক্ষেপ নেয় সুস্মিতা। ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেই পোস্ট তার শাশুড়ি আরতি সাহার পিড়াপিড়িতে তুলে নিতে বাধ্য হয় সুস্মিতা।

আত্মহত্যার দিন সকালে অফিসে আসার সময় পলাশ সুস্মিতাকে জানালা দিয়ে টাটা দিয়েছিল, সেটা নিয়েও শাশুড়ি আরতি সাহা আক্রমণ করে সুস্মিতাকে। তার কিছুক্ষণ পরেই নিজেকে শেষ করে দেয় পলাশ।

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় র্যাব কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা ‘আত্মহত্যা’ করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় র্যাব-৭ এর নগরীর বহদ্দারহাট ক্যাম্পে নিজ অফিস কক্ষে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়।

পলাশ সাহার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। পারিবারিক কলহের জেরে পলাশ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের। তার হাতে লেখা সুইসাইড নোটে লেখা আছে- ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কোঅর্ডিনেট করে।’

পলাশের ফুপাতো বোনের মেয়ে ভাগনি প্রিয়তা পূজা সাহা তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেন- পলাশের মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের মানুষের দোষ সব থেকে বেশি। 

আরএম  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, ঢাকায় ৩৯.৯ ডিগ্রি May 11, 2025
img
পানি চুক্তি, কাশ্মিরসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করবে ভারত-পাকিস্তান May 11, 2025
img
১৪ বার চেষ্টার পর সালমানের পরামর্শে গর্ভবতী হয়েছিলেন নায়িকা May 11, 2025
img
আ.লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত: নুর May 11, 2025
img
বেশি ভিউ পাওয়ার জন্য বাজে ভাবে ক্যামেরা ধরে: তাসনুভা তিশা May 11, 2025
img
পিএসএলের বাকি অংশ বাংলাদেশে আয়োজন করতে পিসিবিকে পরামর্শ May 11, 2025
img
বাংলাদেশ কিনছে ভারতের রাফাল ধ্বংসকারী সেই যুদ্ধবিমান May 11, 2025
img
মর্গে পড়ে ছিল মেয়ের দেহ, বিল মেটায়নি শ্বশুরবাড়ি: মৌসুমীর অভিযোগ May 11, 2025
img
গোবিন্দ আমায় ছাড়া বাঁচবে না : সুনীতা May 11, 2025
img
শান্তি আলোচনায় বসার আগে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির দাবি কিয়েভের May 11, 2025