চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, রাস্তায় গলে পড়ছে পিচ

চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা। তীব্র রোদের তাপে তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা মাঝারি ধরনের এই তাপপ্রবাহে পুড়ছে পুরো জেলা। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমিকরা।

শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা আদ্রতা ছিল ১৬ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

শুক্রবার (৯ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৪ শতাংশ। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এর আগে, বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী সোমবার থেকে তাপমাত্রা একটু কমতে পারে। এছাড়া ১৫ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টির কোনো আভাস নেই।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। শহরের কোর্টরোড-বড়বাজার সড়কে পিচ গলে যেতে দেখা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, বিভিন্ন স্থানে পিচ গলে যাচ্ছে বলে জেনেছি। সেখানে আমরা বালু ছিটিয়ে দিচ্ছি। এতে যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। তবে রোদের এই তীব্রতা চলমান থাকলে যান চলাচলে সামান্য বিঘ্ন ঘটতে পারে। আমরা সব সময় তদারকি করছি যেন কোনো সমস্যা না ঘটে।

জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে শরবত তৈরি করা হচ্ছে। যা তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে কেনাবেচার। পাশাপাশি ডাবেরও চাহিদা বেড়েছে।

একজন শরবত বিক্রেতা গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কয়েকদিন যাবত প্রচুর পরিমাণ শরবত বিক্রি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে লোকের আনাগোনা কম হলেও সকাল বা বিকেলের দিকে আসছেন ক্রেতারা।
ডাব বিক্রেতা আকাশ বলেন, গরমে ডাবের চাহিদাও বেড়েছে। প্রকারভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত একটি ডাব বিক্রি করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার সদরের বেলগাছি গ্রামের কৃষক সজিব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন ভুট্টা কাটার মৌসুম। প্রচণ্ড রোদে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। গত কয়েকদিন যাবত শ্রমিকরা ফজরের আজানের আগে আসছেন এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছেন।

সদরের দীননাথপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গরমে ঘরের বাইরে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আমার দুই বিঘা পানের বরজে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। পান বাড়ছে না। পান পাতা ছোট হয়ে যাচ্ছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে বয়স্কদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা পার হলেই ঝুঁকি থাকে। এ জন্য অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেশি বেশি পানি, ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এফপি/এস এন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫ মাস পর লিবিয়া থেকে ফিরল রিফাতের মরদেহ May 10, 2025
img
দেশের বাজারে ফের কমলো সোনার দাম May 10, 2025
img
পারিবারিক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ভাইয়ের বাসায় যাবেন May 10, 2025
img
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক, আসছে নতুন লঞ্চ টার্মিনালও May 10, 2025
img
বৈঠকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য : সারজিস May 10, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে 'জুলাই শহীদ পরিবার সোসাইটির' সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় May 10, 2025
img
আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ছেড়ে এবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে May 10, 2025
img
৬৭ রান করেও নিজেকে অলরাউন্ডার ভাবছেন না স্পিনার নাসুম May 10, 2025
img
ভারতে অনুপ্রবেশের সময় ঝিনাইদহ সীমান্তে মাদক কারবারিসহ ১৯ বাংলাদেশি আটক May 10, 2025
শাকিব খানের কথা বলতেই ক্ষেপে গেলেন জয় May 10, 2025