সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক, সবাইকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানালেন হাসনাত

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এসময় জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তবে ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখার আহ্বানও জানান হাসনাত।

শনিবার (১০ মে) মধ্য রাতে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামীকাল সরকারি বন্ধ। আমাদেরকে বলা হয়েছে সোমবার (১২ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আমরা প্রজ্ঞাপন নিয়ে আনন্দ মিছিল করব। আপনারা এখন নিরাপদে যার যার বাসস্থানে ফিরে যান। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণে খারতে হবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দিব।

এর আগে, লিখিত বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আমলে নেওয়ার ঘটনাকে আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি। তবে আমরা মনে করি এতটুকুই যথেষ্ট নয়।বিগত সময়েও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা লক্ষ্য করেছি। এছাড়াও, আওয়ামী গণহত্যাকারীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাও আমরা দেখেছি।

তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-ধর্ষণ, ও জুলাই গণহত্যার পর যেখানে তড়িৎ গতিতে খুনি লীগের বিচার হওয়ার কথা ছিল। সেখানে আমরা দেখেছি অনেক জুলাই বিপ্লবী ও আহত যোদ্ধাদের মামলা নিচ্ছে না বিভিন্ন থানা। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলে; এমনকি রাজধানী শহরেও জুলাই যোদ্ধারা আওয়ামী গণহত্যাকারীদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছে। উপরোক্ত বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান এবং পদক্ষেপ আমরা জানতে চাই।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকরী সংস্কার চাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে জনতার পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রমে সরকারকে হাত দিতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের অফিস স্থাপন করতে হবে; যাতে করে তৃণমূলে ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী নাগরিকদের আইনি সেবা পেতে কোনো বেগ পেতে না হয়।

হাসনাত বলেন, আমরা আরও দেখছি- আওয়ামী গণহত্যাকারী এবং তাদের ফ্যাসিবাদের প্রতি সমর্থন উৎপাদনকারী সাংস্কৃতিক, মিডিয়া, এবং অর্থনৈতিক ফ্রন্টগুলো এখনো তাদের স্ব-স্ব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান আন্দোলনকে ভিলিফাই করতে এবং ‘দেশি-বিদেশি শক্তির চক্রান্ত’ হিসাবে উপস্থাপন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য শাহাদাত বরণকারী সকল নাগরিকদের মানবিক মর্যাদার প্রতি চরম অপমান।

তিনি বলেন, আমরা আরও উদ্বেগের সাথে দেখছি, আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পলাতক গণহত্যাকারীদের অর্থনৈতিক যোগান এখনো অটুট রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা জানতে চাই। আওয়ামী লীগের সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাকে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাষ্ট্রায়াত্ত ঘোষণা করে নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

এনসিপি এই নেতা বলেন, আমরা লক্ষ করছি- গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও এর ১৪ দলীয় অংশীদাররা; যারা বিগত ১৫ বছরে ভোটডাকাতির মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার হরণ এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন যুগিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সরকার হিসাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চাই।

তিনি বলেন, আজ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন ও জারি করতে সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সরকারের টালবাহানা ও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আমাদের মনে উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই- ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের বিবরণ, জুলাই গণহত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শিকার ভুক্তভোগীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ, জুলাই যোদ্ধাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের কথা আবশ্যিকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। আমরা আরো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নির্বাচনের ঘোষণার পূর্বে আবশ্যিকভাবে বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে জুলাই অভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, পক্ষ, ও মত এবং সরকারকে উপরোক্ত তিনটি দাবি পরিপূর্ণ ও যথাযথভাবে বাস্তয়নে এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরোক্ত তিনটি দাবির যথাযথ প্রতিফলন রাখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই আমরা।

আরআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বড় ঘোষণা দিলেন জয়শঙ্কর Oct 10, 2025
img
শুরুর একাদশে খেলতে আগ্রহী জামাল, সঙ্গে শমিত-জায়ান Oct 10, 2025
img
ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে : দুদু Oct 10, 2025
img
জুলাই-আগস্টে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লো ২০৪ মিলিয়ন ডলার Oct 10, 2025
img
আর নেই সালমানের সহ-অভিনেতা Oct 10, 2025
img
মাঠের নীরবতা নিয়ে ইংলিশ সমর্থকদের ওপর চটেছেন টুখেল Oct 10, 2025
img
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্তরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন : আসিফ নজরুল Oct 10, 2025
img
সাভারে কোটি টাকার বিষ্ণু মূর্তিসহ গ্রেপ্তার ১ Oct 10, 2025
img

নোবেল শান্তি পুরস্কার

নাম ঘোষণার আগমুহূর্তে ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট! Oct 10, 2025
img
জুলাই সনদের স্বাক্ষরকে ইতিবাচক দেখছে বিএনপি: রিজভী Oct 10, 2025
img
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত কারাগারে আটক থাকা চিকিৎসক আবু সাফিয়া Oct 10, 2025
img
আজ জানা যাবে ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন কিনা! Oct 10, 2025
img
আমরা তো শাপলা দিতে বাধা দেইনি, ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন? : মির্জা ফখরুল Oct 10, 2025
img
ফি দিতে না পেরে, ভারতে মেঝেতে বসেই পরীক্ষা দিতে হলো ১ শিক্ষার্থীকে! Oct 10, 2025
img
গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য আপনার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্য, ফোন কলে ট্রাম্পকে সিসি Oct 10, 2025
img
গাজার সত্য প্রকাশের জন্য আমরা সাংবাদিকদের কাছে ঋণী: পোপ লিও Oct 10, 2025
img
এক চার্জেই মোবাইল ফোন চলবে টানা ৮০ বছর! Oct 10, 2025
img
রাজধানী থেকে বগুড়ার আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার Oct 10, 2025
img
যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত জাতিসংঘ: গুতেরেস Oct 10, 2025
img
বিচ্ছেদের পর হাঁটুর বয়সী মডেলের সঙ্গে হার্দিকের প্রেমের গোপন মুহূর্ত ফাঁস Oct 10, 2025