বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশের নার্সরা : বিএমইউ ভিসি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, নার্সিং পেশার মানোন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের নার্সরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান তৈরি করবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে বিএমইউ ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তার মতে, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত হলে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি নার্সদের চাহিদা বাড়বে।

সোমবার (১২ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব নার্স দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ উপাচার্য এসব কথা বলেন।

ডা. শাহিনুল আলম বলেন, নার্সিং পেশার গুণগত রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো ফিলিপাইন বা ভারতের কেরালার মতো নার্স রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হওয়া, যা থেকে আমরা বছরে বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারব।

তিনি জানান, নার্সিং শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য বিএমইউ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারিকুলাম বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ইংরেজি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। গবেষণাকে উৎসাহিত করতে ফেলোশিপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কাজও চলছে।

উপাচার্য বলেন, রোগীদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের ভরসাস্থল হলো নার্সরা। নার্সিংয়ের মতো মহৎ পেশার দায়িত্ব পালনে নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।

সেবার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করে শাহিনুল আলম বলেন, শুধুমাত্র একটি চাকরির জন্য নার্সিং পেশা নয়। বর্তমানে নার্সিং পেশার জন্য বিশ্ব দুয়ার খুলে গেছে। এ জন্য নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের নার্স হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইংরেজি ভাষা ও কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নার্সিং পেশার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে উচ্চতর নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে এবং নার্সরা এক্ষেত্রে নিজেকে আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে নার্সিং পেশায় বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বেও সুনাম অর্জনে সক্ষম হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার এবং পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন।

সেমিনারে গ্র্যাজুয়েট নার্সিং বিভাগের শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ গাজী বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

দিনব্যাপী আয়োজনের শেষাংশে নার্সিং পেশার ওপর ভিত্তি করে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে নার্সিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা অংশ নিয়ে নার্সিং পেশার গৌরব ও চ্যালেঞ্জগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১৫টি দেশে নার্স পাঠাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নার্স রপ্তানি থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নার্সিং শিক্ষার মান আরও বাড়াতে পারলে এই সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব। 

আরএ/টিএ

Share this news on: