জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এসি ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, এই অবস্থায় জাতিসংঘ তাদের সদর দপ্তর ঠান্ডা রাখার জন্য একটি অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে—নদীর পানি পাম্প করে ভবনের শীতলীকরণের কাজ করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নিচতলায় একটি শক্তিশালী পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যা প্রতি মিনিটে প্রায় ২৬ হাজার লিটার পানি টেনে আনছে পাশের ইস্ট রিভার থেকে। ফাইবার গ্লাস পাইপের মাধ্যমে পানি কমপ্লেক্সের কুলিং প্ল্যান্টে প্রবাহিত হয়, যা রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করে শীতল করা হয়। প্রধান প্রকৌশলী মাইকেল মার্টিনি জানান, এই প্রযুক্তি পুরনো হলেও এটি জ্বালানি সাশ্রয়ী। গ্রীষ্মকালে ইস্ট রিভারের পানি আশপাশের অন্য নদীগুলোর তুলনায় বেশ ঠান্ডা থাকে, আর এজন্যই সেখান থেকে পানি নিয়ে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হয়।
২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দপ্তর ভবনটির সংস্কারের সময় পুরো কুলিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়, যাতে দুটি আলাদা পানির সঞ্চালন প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে। ব্যবহৃত পানি পুনরায় নদীতে ফেলা হলেও যাতে এটি দূষিত না হয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রধান কুলিং কর্মকর্তা ডেভিড লিন্ডসে বলেন, "আপনি যদি বাইরে থেকে জাতিসংঘের ভবনটির দিকে তাকান, কখনোই বুঝবেন না যে, এটি নদীর পানির মাধ্যমে শীতল করা হচ্ছে।"
এছাড়া, শুধু জাতিসংঘের সদর দপ্তর নয়, জেনেভা সদর দপ্তরও লেক জেনেভার পানি দিয়ে শীতল রাখা হয় এবং কোপেনহেগেনে ইউএন সিটি কমপ্লেক্সও সমুদ্রের ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে শীতল হয়। বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি এয়ার কন্ডিশনার পরিবেশে ক্ষতি করছে, আর তাই পানিভিত্তিক কুলিং সিস্টেম একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প হয়ে উঠছে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইএই) তথ্যানুসারে, ১৯৯০ সাল থেকে পরিবেশ শীতল রাখতে বিদ্যুৎ বা জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বেড়েছে, যা পরিবেশবান্ধব বিকল্পের প্রয়োজনীয়তাকে আরো বাড়িয়েছে। যদিও পানি দিয়ে কুলিং সিস্টেম একটি সময়োপযোগী পদ্ধতি, তবে এটি তেমন বিস্তার লাভ করেনি। জাতিসংঘের কুল কোয়ালিশনের সমন্বয়কারী লিলি রিয়াহি বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সমন্বয়, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন।
এ ধরনের কুলিং ব্যবস্থা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে, তবে বাজারে এটি জনপ্রিয় করার জন্য প্রচারণা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিক্ট এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রব থরন্টন।
ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ইতোমধ্যে সেইন নদীর পানি ব্যবহার করে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পানিভিত্তিক কুলিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার কম, লিক হওয়ার ঝুঁকি কম এবং গরম বাতাস ছড়ায় না, যা পরিবেশবান্ধব। তবে, ব্যবহৃত গরম পানি নদীতে ফিরে যাওয়ার কারণে তা জলজ প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, লিলি রিয়াহি বলেন, "এই ঝুঁকি পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে যে গরম পানি নদীতে ফেলা হয়, তার তুলনায় অনেক কম এবং তাপমাত্রা সীমিত রেখে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।"
এসএস/টিএ