পাকিস্তানের সঙ্গে কেবল সন্ত্রাসবাদ এবং পাকিস্তানের দখলকৃত কাশ্মির নিয়ে আলোচনা করতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (১২ মে) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
মোদি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি কোনও সংলাপ হয়, তবে তা কেবল সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মির নিয়ে হবে। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্য ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, বুদ্ধ পূর্ণিমার এই দিনে গৌতম বুদ্ধ শান্তির বার্তা দিয়েছেন ঠিকই, তবে শান্তির পথে চলতেও শক্তির প্রয়োজন হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের সময় থেকেই কাশ্মির ইস্যুর সূত্রপাত। সীমানা নির্ধারণের সময় জম্মু-কাশ্মির কোন দেশের অংশ হবে—তা জানতে চাওয়া হয়েছিল কাশ্মিরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের কাছে। তিনি তখন জম্মু-কাশ্মিরকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই কাশ্মির দখলে অভিযান চালায় এবং শ্রীনগরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তখন রাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন। এরপর ভারতের সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করে।
বর্তমানে কাশ্মির ভূখণ্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের, ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের এবং ২০ শতাংশ চীনের দখলে রয়েছে, যা সিয়াচেন নামে পরিচিত। যদিও ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো জম্মু-কাশ্মিরকে নিজেদের অংশ দাবি করে আসছে এবং এ ইস্যুতে গত ৭৫ বছরে তারা তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
স্বাধীনতার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেন। সংবিধানের ৩৭০ ধারায় বলা হয়েছিল, কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্য রাজ্যের নাগরিক বা বিদেশিরা সেখানে জমি বা সম্পত্তি কিনতে পারবে না।
তবে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বিজেপি সরকার সংসদে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয়।
সম্প্রতি ২২ এপ্রিল অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরুষ পর্যটক নিহত হন। এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন, যেটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
এই ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে সিন্ধু নদ পানি চুক্তি পর্যালোচনা ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল উল্লেখযোগ্য। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতের জন্য আকাশসীমা ও ভিসা বন্ধ করে দেয়।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি অভিযান চালায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে। নয়াদিল্লির তথ্যমতে, এতে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, এতে ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে।
তিন দিন পর পাকিস্তান পাল্টা ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করে। এর আরবি নামের বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এই পাল্টাপাল্টি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের চাপে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
এসএস/টিএ