ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করেছেন। তবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভারত জানিয়েছে, তাদের দীর্ঘদিনের জাতীয় একটি অবস্থান রয়েছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যা ভারত এবং পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ওই নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আপনারা জানেন যে, পাকিস্তান কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত ভারতীয় ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অমীমাংসিত।’ ভারত সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে।
ট্রাম্পের দাবি ছিল, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে ‘যুদ্ধবিরতি’ করতে রাজি করার হুমকি দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে— বাণিজ্য নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আরো জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা ‘অপারেশন সিন্ধুর’ সময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, তবে কোনো আলোচনাতেই বাণিজ্য ইস্যু আসেনি।
এই দাবির প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ১০ মে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক প্রধানদের মধ্যে ফোনে কথা হয়, এবং সেখানেই যুদ্ধবিরতির সময় ও শর্ত নির্ধারিত হয়। পাকিস্তান হাইকমিশনের অনুরোধে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) এই আলোচনায় অংশ নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ১০ মে ভোরে ভারত পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিতে সফল হামলা চালায়, যার পর পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, ‘ভারতের শক্ত প্রতিরোধের কারণেই পাকিস্তান পিছু হটে।’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্য দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ভারত বলেছে, তারা সব দেশের সঙ্গে একই বার্তা দিয়েছে— ‘ভারতের জবাব ছিল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান গুলি চালালে ভারতও চালাবে, আর যদি পাকিস্তান থামে, ভারতও থামবে।’
ভারতের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, এই তথ্য অনেক আন্তর্জাতিক নেতারা পাকিস্তানকেও জানিয়েছেন, যার ফলে ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। সব মিলিয়ে ভারতের বক্তব্য— যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত এসেছে কূটনৈতিক নয়, বরং সামরিক চাপের ফলেই।
ট্রাম্প যেভাবে নিজের ভূমিকা তুলে ধরেছেন, তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না বলে জানিয়েছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ভারত কোনোভাবেই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের সামনে মাথা নত করবে না এবং এমন হুমকির আড়ালে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অনুমতি দেবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মহলকে সতর্ক করেছি, এমন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ তাদের নিজেদের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে।’ জয়সওয়াল জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারতের সামরিক শক্তিই পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির পথে আনতে বাধ্য করেছে। এটা স্পষ্ট যে, এই যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব অন্য কারও নয়, ভারতের সেনাবাহিনীর সাফল্য ও দৃঢ় অবস্থানের ফল।’
সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরআর/টিএ