প্রথমার্ধে ছন্নছাড়া দলের মতো লামিনে ইয়ামালও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। বিরতির পর দুর্দান্ত এক গোল উপহার দিলেন সময়ের আলোচিত এই ফুটবলার। শেষ সময়ে সতীর্থের গোলেও রাখলেন অবদান। এস্পানিওলকে হারিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখে লা লিগা শিরোপা জিতল বার্সেলোনা।
এস্পানিওলের আরসিডিই স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাতে কাতালান ডার্বিতে ২-০ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের দল।
শেষ ১০ মিনিট একজন কম নিয়ে খেলেছে এস্পানিওল। যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ফের্মিন লোপেস।
এক মৌসুম পর লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বার্সেলোনা। স্পেনের শীর্ষ লিগে তাদের ২৮তম শিরোপা এটি। গত আসরসহ রেকর্ড ৩৬ বারের চ্যাম্পিয়ন রেয়াল মাদ্রিদ।
২০২৩ সালে এখানেই শিরোপা নিশ্চিতের পর বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের উদযাপনের সময় মাঠে ঢুকে পড়েছিল ক্ষুব্ধ এস্পানিওল সমর্থকরা।
এবার শিরোপা জিতলে ‘উদযাপনে বাড়াবাড়ি’ না করার কথা ম্যাচের আগে বলেছিলেন কোচ ফ্লিক। কিছুটা উদযাপন অবশ্য ঠিকই করেছেন রাফিনিয়া, লোপেসরা। এস্পানিওলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কিছুটা হাতাহাতিও হয় তাদের। তবে দ্রুতই সামলে নেওয়া হয় পরিস্থিতি।
কোপা দেল রের পর লা লিগা, বার্সেলোনার দায়িত্বে প্রথম মৌসুমেই ঘরোয়া ‘ডাবল’ জয়ের স্বাদ পেলেন জার্মান কোচ ফ্লিক। এছাড়া গত জানুয়ারিতে ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদকে গুঁড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপও ঘরে তোলে তার দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তারা।
৩৬ ম্যাচে ২৭ জয় ও ৪ ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট হলো ৮৫। সমান ম্যাচে ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রেয়াল মাদ্রিদ।
গত রোববার রেয়ালের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জেতা ম্যাচ থেকে এস্পানিওলের বিপক্ষে শুরুর একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনেন বার্সেলোনা কোচ। চোট কাটিয়ে লা লিগায় তিন ম্যাচ পর ফেরেন রবের্ত লেভানদোভস্কি।
পজেশন ধরে রেখে শুরু করলেও চতুর্থ মিনিটে গোল খেতে বসেছিল বার্সেলোনা। দারুণ এক সুযোগ হারান এস্পানিওলের উর্কো গন্সালেস। সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে নিচু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
সপ্তম মিনিটে হঠাৎ খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি। এস্পানিওল গোলরক্ষক ও পরে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।
মূলত ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের বাইরে জট পাকিয়ে থাকা লোকজনের ওপর দিয়ে একটি গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয় এবং এতে আহত হন ১৩ জন। স্টেডিয়ামের স্পিকারে যখন ঘোষণা দেওয়া হয় “সতর্কতা: আমরা জানাচ্ছি যে স্টেডিয়ামের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কেউ গুরুতর আহত হয়নি”, তখন খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি। একটু পরই আবার খেলা শুরু করেন তিনি।
ত্রয়োদশ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় বার্সেলোনা। বক্সের সামনে আলগা বল পেয়ে এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে লেভানদোভস্কির ডান পায়ের জোরাল শট দূরের পোস্টে সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।
ষোড়শ মিনিটে ভয়চেখ স্ট্যান্সনির দৃঢ়তায় বেঁচে যায় বার্সেলোনা। ওয়ান-অন-ওয়ানে হাবি পুয়াদোর শট ঝাঁপিয়ে এক হাতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন পোলিশ গোলরক্ষক।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চললেও প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। বার্সেলোনা কয়েকটি ‘হাফ-চান্স’ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি।
৫৩তম মিনিটে দুর্দান্ত গোলে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন ইয়ামাল। ডান দিকে বক্সের বাইরে দানি ওলমোর সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে এগিয়ে যান তিনি। সামনে তখন প্রতিপক্ষের দুই-তিন জন খেলোয়াড়। আড়াআড়ি এগিয়ে জায়গা বানিয়ে ২০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গার, দূরের পোস্টে ওপরের কোণা দিয়ে বল আশ্রয় নেয় জালে।
৮০তম মিনিটে আরেকটি ধাক্কা খায় এস্পানিওল। বল দখলে নেওয়ার চেষ্টার সময় হাত দিয়ে ইয়ামালের পেটে জোরে আঘাত করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন স্বাগতিক ডিফেন্ডার লিয়ান্দ্রো কাবরেরা। ভিএআরে মনিটরে দেখে সিদ্ধান্তটি নেন রেফারি।
৮৬তম মিনিটে বক্সে আলগা বল পান ইয়ামাল। এবার তার শটে জোর ছিল না তেমন, অনায়াসে ঠেকান গোলরক্ষক।
সাত মিনিট যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে ইয়ামালের পাস ধরে ব্যবধান দ্বিগুণ করার পাশাপাশি শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেন লেভানদোভস্কির বদলি নামা লোপেস।
দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্সে ফুটবল বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ইয়ামাল এই মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচে ১৭ গোল করার পাশাপাশি ২৫টি অ্যাসিস্ট করলেন।
এস্পানিওলের বিপক্ষে লা লিগায় টানা ২৮ ম্যাচে অপরাজিত (৮ জয়, ২০ ড্র) রইল বার্সেলোনা।
৩৬ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে ১৬ নম্বরে আছে এস্পানিওল।
এসএস/টিএ