শেষ হলো ট্রাম্পের গালফ সফর

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (১৬ মে) আবুধাবিতে বিপুল বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফরের গালফ পর্ব শেষ করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ট্রাম্প প্রশাসনকে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এই বিপুল অঙ্কের অর্থনৈতিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি ট্রাম্পের সফরে সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন আশাবাদের কথাও উঠে আসে।

দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফরে ট্রাম্প কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গে বোয়িং জেট কেনার ২০০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের চুক্তি সম্পাদন করেন, যার মধ্যে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রিও রয়েছে।হোয়াইট হাউজ একে ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অস্ত্রচুক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

আবুধাবিতে এক ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে আবুধাবির যুবরাজ খালেদ বিন মোহাম্মদ বিন জায়েদের পাশে বসে ট্রাম্প রসিকতা করে বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছে!’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার দেশের জন্য আমাকে একজন উৎসাহদাতা হতে হবে।’

বৃহস্পতিবার ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ট্রাম্পের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা মজবুত অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন এবং আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন।

হোয়াইট হাউজ জানায়, দুই দেশের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির সঙ্গে ৬০ বিলিয়ন ডলারের অংশীদারিত্ব এবং ইতিহাদ এয়ারওয়েজের বোয়িং বিমানের ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা অসাধারণ একটি দেশ। আপনারা সমৃদ্ধ দেশ। আপনারা যেকোনো পক্ষ বেছে নিতে পারেন, কিন্তু আমি জানি, আপনারা কখনো আমার পাশ ছাড়বেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি আপনার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।

আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের অসাধারণভাবে সম্মান দেখাবো, এবং শেখ মোহাম্মদ একজন অসাধারণ মানুষ, আপনার সঙ্গে থাকা আমার জন্য সম্মানের।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা
হোয়াইট হাউজ আরো জানায়, দুই দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক একটি চুক্তিও সই করেছে, যার আওতায় ইউএই যুক্তরাষ্ট্রে ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ করবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনকানুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে।

তেল-নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রযুক্তির মাধ্যমে বহুমুখীকরণে আগ্রহী ইউএই বর্তমানে বিশেষভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নেতৃত্ব পেতে চায়।

তবে এসব উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে ইউএস-নির্মিত উন্নত এআই চিপসহ নানা প্রযুক্তির ওপর প্রবেশাধিকার প্রয়োজন, যা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এসব বিষয়ে গত মার্চে ওয়াশিংটন সফর করে লবিং করেছেন ইউএই প্রেসিডেন্টের ভাই ও গোয়েন্দা প্রধান শেখ তাহনুন বিন জায়েদ।

এ সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প এই নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন, যা তার পূর্বসূরি চীনের প্রযুক্তিগত প্রবেশ রোধে আরোপ করেছিলেন।

শুক্রবার পরে ট্রাম্প ‘আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউজ’ পরিদর্শন করবেন। ২০২৩ সালে চালু হওয়া এই কমপ্লেক্সে একটি মসজিদ, একটি গির্জা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম সরকারি সিনাগগ রয়েছে। এই কেন্দ্রটি মুসলিম দেশটিতে আন্তধর্মীয় সহাবস্থান প্রচারে গড়ে তোলা হয়েছে।

‘ট্রিলিয়ন ডলারের’ সফর
সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ট্রাম্পকে জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং তিনিও আরব নেতাদের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক।’ যা ট্রাম্পের পূর্বসূরি বাইডেনের আমলে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের শীতল পরিস্থিতির বিপরীতে।

তিনি জানান, সফরের ফলে ‘ট্রিলিয়ন ডলারের’ বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর এই উদারতা কিছু বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। কাতার ট্রাম্পকে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিলাসবহুল একটি বিমান উপহার দেয়, যা ডেমোক্র্যাটদের মতে প্রকাশ্য দুর্নীতির দৃষ্টান্ত।

এই চুক্তিনির্ভর সফরে কূটনৈতিক বড় অগ্রগতিও ঘটে। ট্রাম্প সিরিয়ার নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ২৫ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কোনো সিরীয় নেতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করলেন। তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন, যা সৌদি যুবরাজ ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অনুরোধে করা হয়েছে।

কাতারে সফরের সময় ট্রাম্প জানান, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে, যা সামরিক পদক্ষেপ এড়াতে সাহায্য করবে। এ ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যায়।

তবে গাজা যুদ্ধ নিয়ে কোনো অগ্রগতির ঘোষণা আসেনি, যেখানে কাতার মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করছে। ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজা ‘দখল করে’ একে ‘ফ্রিডম জোনে’ পরিণত করা।

তবে আবুধাবিতে শুক্রবার তিনি স্বীকার করেন যে, ‘গাজার অনেক মানুষ অনাহারে আছে।’ যেখানে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি সহায়তা অবরোধ চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এটি সমাধান করব।’

একইদিনে ট্রাম্প জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, যত দ্রুত এটি আয়োজন করা যায়। এর আগে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা সভায় পুতিন উপস্থিত ছিলেন না, যেখানে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন।

এফপি /টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

ফরিদা পারভীনের প্রয়াণ

জানি না আমার বাঁশির সুরের কী হবে : গাজী আবদুল হাকিম Sep 15, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর লাহোর, ঢাকার অবস্থান ১৯তম Sep 15, 2025
img
দুদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় Sep 15, 2025
img

‘ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় তারুণ্যের ভূমিকা অপরিসীম: প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025
img
এক বিড়ালই স্বরা-ফাহাদকে নিয়ে যায় বিয়ের পিঁড়িতে! Sep 15, 2025
img
ভারত থেকে ২০০ নতুন কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে Sep 15, 2025
img
ডাকসুর পর জাকসুতেও জিতল এক দম্পতি Sep 15, 2025
img
১৫ বছর বয়সে ইতিহাস গড়লেন ওয়েন কুপার Sep 15, 2025
img
ভাঙ্গায় যান চলাচল স্বাভাবিক, রাস্তার পাশে আন্দোলনকারীদের অবস্থান Sep 15, 2025
img
টিকটক নিয়ে আলোচনা এখনও চলমান, ফলাফল নির্ভর করছে চীনের ওপর: ট্রাম্প Sep 15, 2025
img
রাকসু হল সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জন নির্বাচিত Sep 15, 2025
img
আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (১৫ সেপ্টেম্বর) Sep 15, 2025
img
বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক, এরদোয়ান সরকারের পদত্যাগ দাবি Sep 15, 2025
img
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে প্রথম রিলিজ স্লিপের ফল প্রকাশ বিকেলে Sep 15, 2025
img
ন্যাটো জোটের মতো সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে চায় মিশর Sep 15, 2025
img
ইসলামি দেশগুলোকে সামরিক জোট গঠনের আহ্বান ইরাকের Sep 15, 2025
img
বেসামরিক নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ভেনেজুয়েলা Sep 15, 2025
img
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে ১১৫৯ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ-পাচার’ Sep 15, 2025
img
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার নদীর পানি, খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যারাজের সব কটি জলকপাট Sep 15, 2025
img
কাতার ইস্যুতে ইসরাইলকে খুব সতর্ক হতে হবে, বললেন ট্রাম্প Sep 15, 2025