বলিউড ও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা জগতে এখন সবচেয়ে বড় আলোচনা আমির খান ও এস. এস. রাজামৌলিকে ঘিরে। একের পর এক বড় সিনেমা নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা এবং সেই সিনেমাগুলোর বিষয়বস্তুর মিল অনেককে ভাবাচ্ছে – এটা কি শুধু কাকতাল, না কি পরিকল্পিত প্রতিযোগিতা? ২০২৩ সালে রাজামৌলি ঘোষণা করেন তিনি ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা দাদাসাহেব ফালকে-র জীবনের উপর একটি সিনেমা বানাবেন, যার নাম হবে "মেড ইন ইন্ডিয়া"। শোনা যায়, সেই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে থাকতে পারেন জুনিয়র এনটিআর।
এর ঠিক পরের বছর, ২০২৪-এ আমির খান জানান তিনিও দাদাসাহেব ফালকে নিয়ে একটি বড় বাজেটের সিনেমা বানাচ্ছেন। পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন জনপ্রিয় নির্মাতা রাজকুমার হিরানি। এই সিনেমার জন্য ফালকে-র পরিবারের অনুমতি, উন্নত প্রযুক্তি, এবং অনেক বড় অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সিনেমার শুটিং শুরু হবে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে, যেখানে রাজামৌলির ছবি তখনও প্রস্তুতির প্রথম ধাপে।
এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় আরেক পুরনো মিলের কথা। বহু বছর ধরেই রাজামৌলি বলে আসছেন, তিনি মহাভারতের উপর সিনেমা বানাতে চান। সেই সময়েই আমির খানও জানিয়েছিলেন, তিনি মহাভারত নিয়ে কাজ করতে চান। ভারতের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি – দাদাসাহেব ফালকে-র জীবন ও মহাভারত – এই দুই বিষয়ে রাজামৌলি আগে থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছেন, কিন্তু ঠিক তখনই আমির খান এগিয়ে এসে নিজের সিনেমার কথা ঘোষণা করেন।
আমির খান সবসময় খুব পরিকল্পনা করে কাজ করেন। তিনি যখন কোনো সিনেমা হাতে নেন, তখন তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সেরা পরিচালক, টেকনিক্যাল দল, অর্থ – সব কিছু জোগাড় করে নিয়ে কাজ শুরু করেন। ফলে অনেকেই ভাবছেন, আমির কি ইচ্ছাকৃতভাবেই রাজামৌলির মতো পরিচালকদের পরিকল্পনার আগে এগিয়ে আসছেন?
"লাল সিং চাড্ডা" সিনেমার ব্যর্থতার পর আমির খান এখন নতুনভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। অন্যদিকে, "আরআরআর" সিনেমার পর রাজামৌলি বিশ্বজুড়ে নাম করে ফেলেছেন। তাই অনেকেই বলছেন, এখন যেন একপ্রকার লড়াই চলছে – কে আগে ভারতের বড় গল্পগুলো বলবে, আর কে থেকে যাবে দর্শকদের মনে ইতিহাসের অংশ হয়ে।
এই দুই সিনেমা শুধু সিনেমা নয়, এরা ভারতের সংস্কৃতি ও গর্বের প্রতিনিধিত্ব করে। দাদাসাহেব ফালকে মানে আমাদের সিনেমার শুরু, আর মহাভারত মানে আমাদের পুরাতন ইতিহাস ও ধর্মীয় শিক্ষা। এই গল্পগুলো নিয়ে যদি একসঙ্গে দুইজন পরিচালক সিনেমা বানাতে শুরু করেন, তাহলে একটা সিনেমা হয়তো এগিয়ে যাবে, আরেকটা পিছিয়ে পড়বে বা হারিয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে এখনকার এই পরিস্থিতি শুধু সিনেমা বানানোর নয়, বরং ভারতের গল্প বলার অধিকার নিয়ে এক নীরব প্রতিযোগিতা। এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছে সবাই।
আরআর