দেশভাগের পর কি সত্যিই পাকিস্তানি মুদ্রা ছাপিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)? উত্তর হল, হ্যাঁ।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আরবিআই পাক মুদ্রা ছাপার পাশাপাশি তা সরবরাহও করেছিল পাকিস্তানে। কিন্তু কেন?
দেশভাগের পর নতুন দেশ পাকিস্তানে কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ছিল না। তাই ১৯৪৭ সালের মুদ্রা ব্যবস্থা এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আদেশের অধীনে সে দেশের আর্থিক বিকাশের দায়িত্ব ছিল আরবিআইয়ের উপরে।
পাকিস্তানকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করার সিদ্ধান্তটি মুদ্রা ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত একটি বিশেষ কমিটিকে দেশভাগের প্রশাসনিক জটিলতা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মুদ্রা, সম্পত্তি, সরকারি ঋণ এবং কর্মীদের বিভাজন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৯৪৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে মুদ্রা ছাপানোর দায়িত্বে ছিল আরবিআই।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য অস্থায়ী ভাবে পাকিস্তানের জন্যও নোট ছাপতে শুরু করে আরবিআই। সে দেশের জন্য ছাপানো নোটগুলির উপর ইংরেজিতে ‘গভর্নমেন্ট অফ পাকিস্তান’ এবং উর্দুতে ‘হুকুমত-এ-পাকিস্তান’ লেখা থাকত।
পাকিস্তানের নিজস্ব কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালের ৭ জানুয়ারি। তারও কয়েক মাস পর অবধি পাকিস্তানের মুদ্রা ছাপার দায়িত্বে ছিল ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্কই। ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত এই ব্যবস্থা জারি ছিল।
আরবিআই নিয়ে চর্চা করা এক ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম দিকে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও পাকিস্তানের আর্থিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল আরবিআই।
এমনকি, কাশ্মীর নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ার পরেও অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের সমর্থন অব্যাহত ছিল।
দেশভাগ চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের হাতে শেষ কিস্তি হিসাবে ৫৫ কোটি টাকা তুলে দেওয়ার কথা ছিল ভারতের। কিন্তু সে টাকা আটকে রাখে ভারত। তবে মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধের পরে সেই টাকা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৪৮ সালের অক্টোবরে প্রথম স্বাধীন মুদ্রা জারি করে পাকিস্তান। চালু করা হয় ৫, ১০ এবং ১০০ টাকার নোট। ১৯৫৩ সালের মধ্যে ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান’ পুরোদমে মুদ্রা ছাপানো শুরু করে। ২ টাকার নোট যোগ করা হয় পাকিস্তানের অর্থনীতিতে।
যে পাকিস্তানকে ভারত এক সময় অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গা থাকতে সাহায্য করেছিল, সেই দেশই বার বার সংঘাতে জড়িয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতে নাশকতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বার বার।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটক-সহ মোট ২৬ জনকে নৃশংস ভাবে গুলি চালিয়ে খুন করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পাক অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) মোট ন’টি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। এর পরই দুই দেশের মধ্যে তীব্র হয় সংঘাত।
এসএন