পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারত হারাল ১০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি

টানা কয়েকদিনের গোলাগুলি ও পাল্টা হামলার উত্তাপ শেষে আপাতত যুদ্ধবিরতির পর্যায়ে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তারা বর্তমানে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং যুদ্ধবিরতির সময়সীমাও বাড়াচ্ছেন।

তবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সীমান্ত এলাকায় যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বহু সময় লাগবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের টানা হামলায় ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর চেহারা একেবারে বদলে গেছে। কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত গ্রাম। সোমবার (১৯ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং তার পাল্টা পাকিস্তানি হামলায় ১০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরহারা হয়েছেন বহু পরিবার।

সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে জম্মুর পুঞ্চ জেলা। পাকিস্তানি হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে ১৪ জনই এই জেলার বাসিন্দা। স্থানীয় সাংসদ আজাজ জান জানিয়েছেন, জেলার ৯০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬০টিতে হাজার হাজার বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এত বড় মাপের হামলা এর আগে এই এলাকায় হয়নি। পুরো এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা কোনো ঘর দেখা যাচ্ছে না। আজাজ আরও জানান, তিনি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ঘুরে দেখেছেন।

তার ভাষায়, এই এলাকা ভূকম্পনপ্রবণ। বাড়িগুলোর কাঠামো এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, একটি মৃদু ভূমিকম্পেই সেগুলো ভেঙে পড়তে পারে।

তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও জম্মু-কাশ্মিরের প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। তার ভাষায়, অনেকেই এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। পরবর্তী ভূমিকম্পে মারাত্মক বিপদে পড়বেন তারা।

শুধু পুঞ্চ নয়, পাকিস্তানের হামলায় কুপওয়ারা, বারামুলা, রাজৌরি, কারনা ও উরি এলাকাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারনায় ধ্বংস হয়েছে শতাধিক বাড়ি, উরিতে ৪৫৮টি বাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের আরেক সাংসদ জাভিদ আহমেদ জানান, সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে যাওয়া ঘরের জন্য আমরা ১০ লাখ এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের জন্য ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ চেয়েছি।

স্থানীয় তাংদার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ রাশিদ বলেন, গোলাবর্ষণ শুরু হলে আমরা বাঙ্কারে আশ্রয় নিই। থেমে গেলে বাইরে এসে দেখি-সব ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে। এখন অনেকেই আত্মীয় বা প্রতিবেশীর বাড়িতে সাময়িক আশ্রয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। পাকিস্তানের এই হামলায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মাসির আসলাম ওয়ানি। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করছে। পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যদিও বর্তমানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবে সীমান্তে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে-তা দীর্ঘস্থায়ী। হাজার হাজার ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর পুনর্বাসন উদ্যোগ। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার কীভাবে এই মানবিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে।

টিকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পরীমনিকে ঘিরে ছড়াল মৃত্যুর গুজব, ফেসবুক লাইভে দিলেন জবাব May 20, 2025
img
শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করে এবার ট্রাম্পের ডিপফেক ভিডিও, যা বলছে ফ্যাক্টচেক! May 20, 2025
img
বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরলো আরব আমিরাত May 20, 2025
img
কোনো মালিক নেই! রাস্তায় পড়ে আছে কোটি টাকার গাড়ি May 20, 2025
img
ঝিনাইদহে পরিত্যক্ত ব্যাগে মিলল কোটি টাকার হেরোইন May 20, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইলেন সারজিস May 20, 2025
img
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের মশাল মিছিল May 20, 2025
img
হাইওয়েতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, জব্দ ১০ টন পলিথিন May 20, 2025
img
তামিমের ফিফটিতে ছন্দে বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টিতে ২০৫ রানের পাহাড় May 20, 2025
img
অনামিকার বাড়িতে প্রসেনজিৎ-দেবশ্রীর বিশেষ সময়, এখন শুধুই স্মৃতি May 19, 2025
img
বন্দরে বায়ুদূষণবিরোধী অভিযানে ২ লাখ টাকা জরিমানা May 19, 2025
img
অবৈধ অভিবাসনের দায়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের May 19, 2025
হাতের আঙ্গুলে চুটকি বাজিয়ে খালি গলায় মেকআপ সুন্দরী গান May 19, 2025
img
জাতীয় ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত নেই: আলী রীয়াজ May 19, 2025
এশিয়া কাপ থেকে সরে গেল ভারত? May 19, 2025
তিন ফরম্যাটের ব্যাটার হতে চায়: মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন! May 19, 2025
বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত, চীন থেকে টেসলার যন্ত্রাংশ আমদানি May 19, 2025
সীসা থেকে স্বর্ণ, সম্ভব করলেন সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা! May 19, 2025
১৫টি আমের ‘শিপমেন্ট বা'তি'ল করেছে মার্কিন প্রশাসন May 19, 2025
ভিসা ছাড়াই চীনে ভ্রমণের সুযোগ! May 19, 2025