স্টারলিংকের ডাটা ব্যবহারে কোনো লিমিট নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

স্টারলিংকের ডাটা ব্যবহারে কোনো সীমা বা লিমিট নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর মধ্যে দিয়ে আজ আমরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি। যা অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের নির্দশন।

মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, মাত্র ৯০ দিন আগে বাংলাদেশে কোনো এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অপারেটর) লাইসেন্স ছিল না। এ ৯০ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি এনজিএসও গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং তার ভিত্তিতে একমাত্র অপারেটর হিসেবে স্টারলিংক আবেদন করেছে। সেই আবেদন প্রসেস করে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে একই বছরের মে পর্যন্ত মাত্র চার মাসের মধ্যেই তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলো। বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন লাইসেন্সের ইতিহাসে এত দ্রুত রোল আউট নজিরবিহীন।

তিনি জানান, স্টারলিংকের ডাটা ব্যবহারে কোনো সীমা বা লিমিট নেই। এর লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবহারকারী হলো সেই সব এলাকা, যেখানে এখনো ফাইবার সংযোগ পৌঁছায়নি। বর্তমানে দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার কানেকশন রয়েছে। বাকিগুলোর সংযোগ মূলত লো ক্যাপাসিটি মাইক্রোওয়েভ লিংকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

ফয়েজ তৈয়ব বলেন, বাংলাদেশে এখনো হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে, যেগুলোর ব্যান্ডউইথ মাত্র ৩০০ এমবিপিএস, যা হাজারো গ্রাহকের মধ্যে ভাগ হয়। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে মাত্র একটি সেটআপ বক্স (মূল্য ৪৭,০০০ টাকা) দিয়ে একজন গ্রামীণ উদ্যোক্তা নিরবচ্ছিন্ন ও লো লেটেন্সি উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এটি সংসদ ভবন বা উপদেষ্টার অফিসের ইন্টারনেট স্পিডের সমান হবে।

তিনি বলেন, আমরা এনজিএসওর বিধিবিধান এমনভাবে করেছি যেন এটি উদ্যোক্তাবান্ধব হয়। একজন বা একাধিক উদ্যোক্তা মিলে ৪৭ হাজার টাকার তহবিল গঠনের মাধ্যমে সেটআপ বক্স কিনে তাদের আশপাশের দোকানে ইন্টারনেট বিক্রি করতে পারবেন। ওয়াইফাই রেঞ্জ ২০ থেকে ৫০ মিটার হওয়ায় গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টারে সহজেই বহু দোকানে এই সেবা পৌঁছে যাবে।

ফয়েজ তৈয়ব বলেন, আইনে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়নি। শহরের বাসভবনেও ওয়াইফাই শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্টারলিংক ব্যবহার করা যাবে। বিল্টইন রাউটারের কারণে এটি আইএসপি সেটআপেও ব্যবহারযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি, ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন ও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থসংস্থানের সুযোগ রাখার পরিকল্পনা করছি। যারা নাগরিক সেবা দেবেন, তাদের জন্য স্টারলিংক সহজলভ্য করতে আমরা ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজ তৈরির কাজ করছি। স্টারলিংকের মাসিক খরচ বেশি হলেও তা নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে কমিয়ে ৬,০০০ ও ৪,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এটি কিছুটা বেশি হলেও যেহেতু তা শেয়ারযোগ্য এবং বিক্রির ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ নেই, তাই উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর ব্যবসা মডেল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

ফয়েজ তৈয়ব বলেন, আমরা সবাই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ফোন লেডি’ ধারণায় বড় হয়েছি। স্টারলিংকের মাধ্যমে ‘ওয়াইফাই লেডি’ ধারণায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে। শুধু গ্রামীণ নারীদের বিশেষ ঋণ দিয়ে এই সেবায় যুক্ত করা সম্ভব। ভবন ছাড়াও ইনফর্মাল কো-ওয়েবিং ব্যবসার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যাবে।

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক সহনীয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফয়েজ তৈয়ব বলেন, একটি ভবনে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট মিলে এই সেবা নিতে পারবে। ওয়াইফাই রেঞ্জ ২০ মিটার হলেও একই ফ্লোর বা পাশের ইউনিটের বাসিন্দারা সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। এককালীন খরচ বেশি হলেও সমবায় ভিত্তিতে তা সহনীয় হয়ে উঠবে।

স্টারলিংকের রিজিওনাল প্রাইস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রিজিওনাল প্রাইস অ্যানালাইসিস করে দেখেছি যে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম। এমনকি শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড থেকেও কম। যেহেতু শেয়ারিংয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, তাই দাম সবার নাগালে থাকবে।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানির স্বার্থ দুভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে— এক. সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মাধ্যমে, দুই. স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে। সব মিলিয়ে স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের টেলিকম খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, ডিভাইস আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট, ট্যাক্স ও রেট প্রযোজ্য থাকবে এবং এনওসি গ্রহণ করতে হবে।

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

 আরএম/এসএন 



Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিয়ানমারে অবৈধভাবে পণ্য পাচারের সময় আটক ১১ Sep 16, 2025
img
চবিতে ‘হোস্টেল সংসদ’ নির্বাচনের ঘোষণা Sep 16, 2025
img
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করল বিএসএফ Sep 16, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 16, 2025
img
দুই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে শ্রীলঙ্কা, খালি হাতে বিদায় নিল হংকং Sep 16, 2025
img
ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি করল এনবিআর Sep 16, 2025
img
ইভ্যালি থেকে বেরিয়ে একই কৌশলে প্রতারণা, নারী গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
এশিয়া কাপ জিতেনি বাংলাদেশ গুগোল করে নিশ্চিত হলেন ট্রট Sep 16, 2025
img
ড. ইউনূস ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য উমামার লিখিত আবেদন Sep 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন, তাহলে নির্বাচন বর্জনের দরকার হবে না Sep 16, 2025
img
আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Sep 16, 2025
img
আগস্টে ৪৯ মামলায় জড়িত ৩১১ দুর্নীতিবাজ Sep 15, 2025
img
১৫ কেজির কোরাল মাছ বিক্রি ১৮ হাজারে Sep 15, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সামনে হংকংয়ের ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জ Sep 15, 2025
img
নিকুঞ্জে নাগরিক জাগরণ: হারানো শান্তি ফিরে পাওয়ার গল্প Sep 15, 2025
img
সুপার ফোরে খেলবে বাংলাদেশ, আত্মবিশ্বাসী কোচ Sep 15, 2025
img
ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রশংসায় জনাথন ট্রট Sep 15, 2025
img
অসুস্থ অমিতাভকে ২০০ জন ৬০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন Sep 15, 2025
img
অতিরিক্ত ৬ বছরের কারাভোগ শেষে ভারতে ফিরলেন রামাতা Sep 15, 2025