ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশের জন্য এয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট রুট বাতিল করার পর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের কাছে তৈরি পোশাক পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরইমধ্যে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষের দিকেই এয়ার শিপমেন্ট কার্যক্রম শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ২৭০ মেট্রিক টন পণ্য ধারণক্ষমতার দুটি ওয়ারহাউস প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে ইত্তেহাদ ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে কার্গো পণ্য পাঠানো হতো। তবে করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে ২০২১ সালে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। তবে এবার নতুন করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এয়ার কার্গো চালুর উদ্যোগকে ব্যবসায়ীরা সম্ভাবনাময় ও স্বস্তিদায়ক হিসেবে দেখছেন।
একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানান, “যদি চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হয়, তাহলে আমাদের খরচ যেমন কমবে, তেমনি সময়ও বাঁচবে। আগে যেমন চট্টগ্রাম বন্দরে একদিনেই পণ্য পৌঁছানো যেত, এবার এয়ার কার্গো থেকেও একই সুবিধা পাওয়া যাবে।”
বর্তমানে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেডসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ৪০০-র বেশি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। কিন্তু এতদিন চট্টগ্রাম এয়ার শিপমেন্টে পিছিয়ে ছিল। এখন এই সুযোগ চালু হলে এসব কারখানার রপ্তানি কার্যক্রম আরও গতি পাবে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ১৭০ থেকে ১২০ মেট্রিক টন পণ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ওয়ারহাউস খালি করা হয়েছে এবং সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ইউরোপে পণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন ইইউ অনুমোদিত R3 জোন সিকিউরিটি প্রোটোকল চালুর কাজ চলছে, যা বাস্তবায়নে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমানে করে সীমিত পরিসরে পণ্য পাঠানো হলেও এবার বিশেষায়িত কার্গো ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ম্যানপাওয়ার ও ইন্সপেকশন টিম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে কার্গো রিসিভার সম্প্রসারণ, নতুন শেড নির্মাণ, কোল্ড স্টোরেজ মেরামত, দুটি ডুয়েল ডিও স্ক্যানিং মেশিন ও ওয়াকথ্রু মেটাল ডিটেক্টর বসানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে।
এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকরা বড় পরিসরে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরআর/টিএ