প্রথম দিনে কানে তিনি কী খেয়েছেন, তার ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন অভিনেত্রী। তাতে দেখা যাচ্ছে, চকোলেট সসে প্রায় ঢেকে যাওয়া কয়েকটি প্যানকেক। তার উপরে ভ্যানিলা ক্রিমের টপিং। দারচিনি আর কোকো পাউডারের গুঁড়ো ছড়ানো। আর সবার উপরে অকৃপণ হাতে চকলেট সস ঢেলে দিয়েছে কেউ। ছবির বিবরণে জাহ্নবী লিখেছেন ‘ব্রেকফাস্ট অফ চ্যাম্পস’। অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়নের প্রাতরাশ।কানে জাহ্নবীর প্রথম দিনের প্রাতরাশ।
![]()

প্রাতরাশ হিসাবে প্যানকেক দারুণ সুস্বাদু খাবার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে খাবার নিয়ে আলোচনায় যদি ফ্রান্সের কথা আসে, তবে প্যানকেক ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে কথা বলা যায়। ফ্রান্সের খাবারকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খাবারের একটি বলে মনে করেন অনেকেই। সেই ফ্রান্সেরই দক্ষিণের সৈকত শহর হল কান। এই শহরের নিজস্ব ঘরানার কিছু খাবার আছে, যা খাদ্যরসিকেরা এক বার মুখে দিলে ভুলতে পারেন না।
১। টাট ট্রোজ়িয়েন
ফ্রান্সে এক ধরনের পাউরুটি পাওয়া যায়। দেখতে গোলগাল ওই পাউরুটির বিশেষত্ব হল এটি বানানোর জন্য ডিম এবং মাখন বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। তাই এই পাউরুটি হয় নরম স্পঞ্জের মতো। টাট ট্রোজ়িয়েন বানানোর জন্য এই পাউরুটিকে দু’ভাগে ভাগ করে মাঝে দু’রকমের ক্রিমের ঘন পরত দিয়ে দেওয়া হয়। একটি পেস্ট্রি ক্রিম, অন্যটি বাটার ক্রিম। উপরে ছড়িয়ে দেওয়া চিনির দানা। কানে জাহ্নবীর মতো মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য এই মিষ্টি খাবারটি আদর্শ।
২। র্যাটাটুয়ি
এই খাবার নিয়ে একটি আস্ত অ্যানিমেশন ছবি হয়ে গিয়েছে। তবে র্যাটাটুয়ি শুধু কান নয় গোটা ফ্রান্সেই জনপ্রিয়। খাবারটি পুরোপুরি নিরামিষ। সব্জি দিয়ে তৈরি স্ট্যু। তবে স্ট্যু বলতে ভারতীয়েরা যেমন ঝোল বোঝেন, এটি তেমন নয়। টম্যাটো, বেলপেপার, বেগুন, জ়ুকিনি এবং পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি এই খাবারে বিশেষ স্বাদ আনতে দেওয়া হয় রসুন, টম্যাটোর পেস্ট এবং হার্ব দে প্রভেন্স নামের এক ধরনের মশলা। যা আসলে রোজ়মেরি, থাইম, অরিগ্যানো, ল্যভেন্ডারের পাতা এবং আরও দু’-একটি স্থানীয় ভেষজের মিলমিশ। এই মশলা অবশ্য তৈরি করা অবস্থায় ইদানীং ভারতেও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে পাওয়া যায়।
৩। পিসালাডেয়ার
পিৎজ়ার মতো দেখতে। অথচ তাতে রয়েছে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি জাতীয় সিফুড! সৈকত শহরে ‘সিফুড’ জনপ্রিয় হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে তার সঙ্গে ইতালীয় খাবার পিৎজ়া বানানোর ধরন মিলিয়ে পিসালাডেয়ার অন্য মাত্রা পেয়েছে। পুর যেমনই হোক, এর পাউরুটি বানানোর প্রক্রিয়াটি বদলায় না। ক্যারামালাইজ় করা পেঁয়াজ, তার সঙ্গে টম্যাটো আর কালো রঙের অলিভ মেশানো পাউরুটির উপরে দেওয়া মাছ বা অন্য যে কোনও সিফুড দিয়ে তৈরি টপিং। টক-ঝাল-মিষ্টির এক মিলিজুলি স্বাদ রয়েছে এ খাবারে। যা কানের প্রায় সব বেকারিতেই পাওয়া যায়।
৪। বেনিয়ে দে ফ্লিউর দে কোরগেটস
নামটি অদ্ভুত। তবে রান্নাটি সোজা। কোরগেট হল জ়ুকিনি। ঝিঙে আর লাউয়ের মাঝামাঝি দেখতে এই সব্জি, ভারতীয়দের কাছে এখন আর অচেনা নয়। সেই জ়ুকিনির ফুল হল ফ্লিউর দে কোরগেটস। আর তাকে ব্যাটারে ডুবিয়ে তেলে ভেজে নিলেই তৈরি বেনিয়ে দে ফ্লিউর দে কোরগেটস। বাংলায় কুমড়ো ফুল বা বক ফুলের বড়া ভেজে খাওয়ার চল আছে। কানের এই রান্নাটি অনেকটাই সে রকম। শুধু ফুলটি ব্যাটারে ডুবিয়ে ভাজার আগে তার ভিতরে নরম ক্রিমের পুর ভরে দেওয়া হয়। ফলে জ়ুকিনি ফুলের ‘বড়া’ বা ফ্রিটারস হয়ে ওঠে আরও স্বাদু।
৫। সোকা
সোকা হল খাঁটি ফরাসি পরোটা। তবে গমের আটা বা ময়দার বদলে এই পরোটা বানানো হয় কাবলিছোলার আটা দিয়ে। কান শহরের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিটফুড হল সোকা। কাবলি ছোলার আটা বেলে তাকে অলিভ অয়েলে ভেজে গোলমরিচ, নুন ছড়িয়ে লোহার তাওয়ায় মুচমুচে করে ভাজা হয় এই পরোটা। তার পরে তিন কোনা টুকরোয় কেটে পরিবেশন করা হয় কাগজে মুড়ে। স্থানীয়েরা অবশ্য বলেন, এ খাবার মদ্যপানের পরে হ্যাংওভার কাটানোর জন্যও উপকারী।
এফপি/টিএ