পুরো ক্যারিয়ারে তিনি করেছেন শিল্পিত সব গোল, দলের প্রয়োজনে মহামূল্য সব গোলের পসরাও সাজিয়ে বসতেন লিওনেল মেসি। শিল্পিত গোলের কথা বললে উঠে আসবে ২০১১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঝমাঠ থেকে উঠে এসে পুরো রক্ষণকে দর্শক বানিয়ে করা গোল, মহামূল্য গোলের কথা ভাবলে ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের সে গোল, কিংবা ২০১৭ সালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাঁচা মরার লড়াইয়ে করা হ্যাটট্রিকের একটি গোল উঠে আসতে পারত।
তবে সেসব গোল নয়, লিওনেল মেসির পছন্দের শীর্ষে আছে তার ‘কৈশোরের’ এক গোল।
বাম পায়ের জাদুতে মেসি বহুবার মোহে ফেলেছেন ফুটবল বিশ্বকে। মেসির নিজের পছন্দের গোলটা অবশ্য বাম পা থেকে আসেনি। এসেছে তার মাথা থেকে। হেডে করা এক গোলকেই নিজের পছন্দের গোল বলে ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
পুরো ক্যারিয়ারে ৮৬০ গোল করেছেন মেসি। তবে তার এতসব গোলের ভিড়ে প্রিয় গোল বেছে নেওয়াটা সহজ কাজ ছিল না আদৌ। সে কঠিন কাজটাই তিনি করেছেন সম্প্রতি। বেছে নিয়েছেন নিজের সবচেয়ে পছন্দের গোলটাকে।
মেসির পছন্দের গোলটা এসেছে ২০০৯ সালের ২৭ মে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনা যেবার প্রথম বারের মতো জিতেছিল ট্রেবল। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে স্যামুয়েল এতোর করা গোলে এগিয়ে ছিল বার্সা। মেসি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়েছিলেন। সে গোলটা মেসি করেছেন হেড থেকে, ডান পাশ থেকে জাভির করা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ইউনাইটেড রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বলটা জালে আছড়ে ফেলেন তিনি।
মানবীয় আয়ুর হিসেবে মেসি তখন ২১ বছর বয়সী তরুণ। তবে এরপরও ‘কৈশোর’ বলার কারণ তার ফুটবলীয় জীবন। ফুটবলীয় বিচারে তখন ‘কিশোর’ ছিলেন মেসি, তা পেছনে ফেলে তারুণ্যে পা দেওয়ার বার্তাটা তিনি এ গোল দিয়েই দিয়েছিলেন। সে বছরই ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি অরটা হাতে তুলেছিলেন আর্জেন্টাইন মহানায়ক। সে গোলটাই তাই তার কাছে ভীষণ দামি।
হেডে করা এক গোলকে পছন্দের বানানোর আরও একটা কারণ হতে পারে তার দুষ্প্রাপ্যতা। মেসি পুরো ক্যারিয়ারে ৮৬০ গোল করলেও হেডে করেছেন মোটে ২৮ গোল। সেটাও কারণ হতে পারে বটে। সে ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও। সে ম্যাচে করা এ গোলটা তার প্রিয় হওয়ার কারণ কি এটাও?
সে যাই হোক, মেসি শিল্পিত কিংবা মহামূল্য গোলের হিসেবে না গিয়ে নিজের মনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার অনেক গোলই আছে যেগুলো হয়তো এই গোলের চেয়ে বেশি সুন্দর কিংবা তার চেয়ে বেশি মূল্যবান। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে করা হেডার থেকে করা এই গোলটাই আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের।’
রেকর্ড ৮ ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির হঠাৎ নিজের সবচেয়ে পছন্দের গোল বেছে নেওয়ার কারণ আছে অবশ্য। ইন্টার মায়ামি ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে ‘গোল ইন লাইফ’ নামের দাতব্য কাজের জন্য এ কাজটি করেছেন। এখন গোলটাকে একটা চিত্রকর্মে রূপ দেওয়া হবে, তোলা হবে নিলামে। সে অর্থটা যাবে দাতব্য কাজে।
আরআর/টিএ