দু’জনেই বলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা। বেশ কয়েকটি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের মধ্যে ছিল অম্লমধুর সম্পর্ক। খ্যাতি তাঁদের মধ্যে এতটাই দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছিল যে, অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনেতার উপর পোষা রাগ উগরে দিয়েছিলেন বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভ বচ্চন।
পাঁচ দশক ধরে বলিপাড়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অমিতাভ। ২০০টির বেশি ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেছেন তিনি। সত্তর থেকে আশির দশকে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছিলেন তিনি। কিন্তু কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠাই নাকি কাল হয়েছিল অমিতাভের। এমনটাই দাবি করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা।
শত্রুঘ্নের স্মৃতিকথাকে বইয়ের পাতায় তুলে ধরেছেন ভারতী এস প্রধান। বইটির নাম ‘এনিথিং বাট খামোশ: দ্য শত্রুঘ্ন সিন্হা বায়োগ্রাফি’। সেই বইয়ে অমিতাভের স্বভাব এবং দুই অভিনেতার তিক্ত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কেরিয়ারের সিঁড়িতে চড়া শুরু করেছিলেন শত্রুঘ্ন। সেই সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন অমিতাভ। দুই অভিনেতা ‘দোস্তানা’, ‘শান’, ‘নসীব’-এর মতো হিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন খুব একটা সহজ ছিল না।
শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘অমিতাভ এবং আমি যখন একসঙ্গে কোনও ছবির শুটিং করতাম তখন ওর পাশে আমার চেয়ার রাখা হত না। এমনকি, অমিতাভের ধারেকাছে আমরা কেউ যেতেও পারতাম না। শুটিংয়ের শেষে হয়তো আমরা একই হোটেলে ফিরছি। কিন্তু অমিতাভ কখনও একসঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দিত না। ও একা নিজের গাড়িতে যেত।’’
শত্রুঘ্নের দাবি, অমিতাভ নাকি তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে চাইতেন না। অমিতাভের সঙ্গে অভিনয় করতে হবে জানার পর একাধিক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শত্রুঘ্নও। ছবিনির্মাতাদের অগ্রিমও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান অভিনেতা।
অমিতাভের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বইয়ে শত্রুঘ্ন উল্লেখ করেছিলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু কখনও কখনও তা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। তবে বয়স এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারে। তখন মনে হয়, কিছু জিনিস করা উচিত হয়নি। অমিতাভের কথা মনে পড়লে আমার খারাপ লাগে। আমার তরফে কিছু ভুল হয়েছিল। আশা রাখি অমিতাভও নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে।’’
কানাঘুষো শোনা যায় যে, শত্রুঘ্নের উপর অমিতাভের এতই রাগ হয়েছিল যে শুটিং চলাকালীন মারধর করতে শুরু করেছিলেন তাঁকে। পরিচালক চিৎকার করে বার বার থামতে বললেও মারধর থামাচ্ছিলেন না অমিতাভ। শেষে অন্য এক অভিনেতা তাঁদের থামিয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালে যশ চোপড়ার পরিচালনা এবং প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘কালা পাত্থর’। এই ছবিতে অমিতাভ, শত্রুঘ্নের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন শশী কপূর, নীতু কপূর, পরভিন ববি, রাখী গুলজ়ারের মতো বলি তারকারা। এই ছবির শুটিংয়ের সময়ও অমিতাভ এবং শত্রুঘ্নের মধ্যে অশান্তি বেধে গিয়েছিল।
চিত্রনাট্য অনুযায়ী ‘কালা পাত্থর’-এর একটি দৃশ্যে শত্রুঘ্নকে বেলচা দিয়ে মারার কথা ছিল অমিতাভের। সেটে সেই দৃশ্যের শুটিং করছিলেন দুই অভিনেতা।
গুঞ্জন শোনা যায়, অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয়ের সময় শত্রুঘ্নের উপর রাগ যেন বার করে দিচ্ছিলেন অমিতাভ। দৃশ্যটি শুট করা শেষ হয়ে গেলেও মারধর থামাচ্ছিলেন না তিনি।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, যশ চিৎকার করে বার বার ‘কাট, কাট’ বললেও অমিতাভের কানে যেন কথাই যাচ্ছিল না। শত্রুঘ্নকে পিটিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন শশী। অমিতাভ এবং শত্রুঘ্নকে গিয়ে থামিয়েছিলেন তিনি।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, শুটিংয়ের সময় মাঝেমধ্যেই দেরি করে সেটে পৌঁছোতেন শত্রুঘ্ন। অন্য দিকে, সময়ানুবর্তী ছিলেন অমিতাভ। রোজ নির্দিষ্ট সময়েই সেটে পৌঁছে যেতেন তিনি। তা নিয়ে নাকি শত্রুঘ্নের উপর বিরক্ত ছিলেন অমিতাভ। তা ছাড়া পেশাগত ক্ষেত্রেও দুই অভিনেতার মধ্যে নীরব ‘লড়াই’ চলত। সব মিলিয়ে অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয়ের সময় শত্রুঘ্নের উপর সমস্ত রাগ বার করে দিয়েছিলেন অমিতাভ।
একসঙ্গে মাত্র ছ’টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ এবং শত্রুঘ্ন। পরে দুই অভিনেতা একই ছবিতে কাজ না করলেও তাঁদের মধ্যে তিক্ততা দূর হয়ে গিয়েছিল। শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘কখনও লোকে নিজে থেকেই রেগে যায়। কখনও আবার অন্য লোকে রাগাতে বাধ্য করে। দু’তরফের দোষ রয়ে যায়।’’
শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘সাফল্যের বিষক্রিয়া সাংঘাতিক। উত্তেজনার বশে মানুষ নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। অমিতাভ আমার চেয়ে বয়সে বড় হলেও অভিনয়জগতে ওর চেয়ে আমার অভিজ্ঞতা সামান্য বেশি। আমাদের মধ্যে এখন ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করি আমরা।’’
টিকে/টিএ