ব্যক্তি-দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান শিবিরের

ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত মোকাবিলায় দেশপ্রেমিক সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

শুক্রবার (২৩ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল ১৯০ বছর পর ব্রিটিশ শোষণ-বঞ্চনা থেকে এই জনপদ মুক্তি পেলেও শুরু হয় পাকিস্তানি শাসনের নতুন অধ্যায়। ভৌগোলিক দূরত্ব, পাকিস্তানের শাসকদের অপরিণামদর্শিতা ও জুলুম-নির্যাতনের অনিবার্য পরিণতিতে ১৯৭১ সালে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

কিন্তু গণতন্ত্রের লেবাসধারী ও ফ্যাসিবাদের প্রতীক শেখ মুজিব সীমাহীন ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়কে বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসনের মাধ্যমে সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার সব পথ রুদ্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর চক্রান্তের কারণে ১৯৪৭, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালের আন্দোলনসহ কোনো অভ্যুত্থানকেই প্রকৃত বিপ্লবে রূপদান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

সব দুঃশাসন ও আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল ভেঙে সম্প্রীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ২০২৪ সালে আবারও একত্রিত হয়। সংঘটিত হয় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের প্রতীক—ঐতিহাসিক ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। সৃষ্টি হয় নতুন দেশ গঠনের এক সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও জাতির ভাগ্যে ব্যর্থতা ও গোলামির চিহ্ন এঁকে দিতে চায় দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, গুটিকয়েক ব্যক্তির শিশুসুলভ অপরিপক্ব চিন্তা ও অদূরদর্শিতার কারণে জাতি আজ বিভক্তির পথে। তারা ফ্যাসিবাদী বয়ানগুলোকে সামনে এনে দেশপ্রেমিক শক্তিসমূহকে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভক্ত করার প্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। অথচ এই বাহিনী জুলাই ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানসহ ইতিহাসের প্রতিটি সংকটে জাতির পাশে ছিল এবং দেশের শান্তি ও স্থিতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তবে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ওপর জুলুম চালিয়েছে, তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তিযোগ্য।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে প্রয়োজন জুলাই স্পিরিটকে ধারণের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় ও সুসংহত করা। জাতীয় ঐক্য কোনো স্লোগান নয়, এটি সময়ের দাবি, ইতিহাসের শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায়, বিশেষ করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের চতুর, সর্বগ্রাসী ও নির্মম কৌশলের মুখে, আমাদের সামনে একটিমাত্র পথ খোলা রয়েছে, সেটি হলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। এর পরিবর্তে জাতীয় ঐক্য বিনাশে যারা ভূমিকা রাখবে, ইতিহাস তাদের ‘জুলাই গাদ্দার’ হিসেবে চিহ্নিত করবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাইয়ের স্পিরিট—ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থ ও পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে একতাবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার দৃঢ়তা আমাদের সামনে যে কোনো সংকট জয় করার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। তাই আমরা সব ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ও নাগরিকদের ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় সংকট মোকাবিলায় ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ এখনো জুলাইয়ের স্পিরিটকে গভীরভাবে লালন করেন। আমরা বিশ্বাস করি নতুন প্রজন্ম জীবন দিয়ে হলেও জুলাইকে সফল করার মাধ্যমে একটি উন্নত, অগ্রসর, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

আরএম 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
আজ খোলা থাকবে সরকারি অফিস-ব্যাংক May 24, 2025
img
বাংলাদেশে আর কোনো এক-এগারো হবে না : রাশেদ খান May 24, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান তুহিন মালিকের May 24, 2025
img
রিশাদের জাদুতে ফাইনালে লাহোর! May 24, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠনের কাজ শুরু May 24, 2025
img
সাভার উপজেলা মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি গ্রেফতার May 24, 2025
img
আসছে নতুন নোট, ডিজাইনে থাকবে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও গ্রাফিতি May 24, 2025
img
হামজা-শমিত বাংলাদেশে আসছেন ৩জুন May 24, 2025
img
ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় কৃষক লীগ নেতা গ্রেফতার May 24, 2025
img
দ্রুত বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি May 24, 2025
img
লিংকনের ঐতিহাসিক দস্তানা বিক্রি হলো সাড়ে ১৮ কোটিতে May 24, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে পদত্যাগের হুমকি ড. ইউনূসের: নিউইয়র্ক টাইমস May 24, 2025
img
রোমে ফের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিরা May 24, 2025
img
মঙ্গলের বিস্ময় : আগ্নেয়গিরি ও গিরিখাতে ঢাকা অজানা জগত May 24, 2025
img
রুশ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত May 24, 2025
img
একদিনে প্রায় ৮০০ যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিলো রাশিয়া-ইউক্রেন May 24, 2025
img
ইংল্যান্ড দলে টনি, সৌদিতে দেখিয়েছেন দুর্দান্ত পারফরমেন্স May 24, 2025
img
বিয়ের আগেই ‘স্বামীর মৃত্যু’ মুখে আনলেন ঋতাভরী! May 24, 2025
img
ঢাকায় দুপুরের মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা May 24, 2025
img
'আব্বাস আফ্রিদির বাদ পড়া অন্যায়' May 24, 2025