পরস্পরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নেতাকর্মীরা। নিজ সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির পাল্টা অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মারজুক আব্দুল্লাহ। জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ঘটনার ৯ মাস পর করা মামলাকে পুঁজি করে সংগঠনের বরিশাল জেলার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সাগর ও মুখপাত্র সুমি হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার (২৪ মে) দুপুরে বরিশাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ করেন এ মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সদ্য পদ স্থগিত হওয়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব মারযুক আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, আমার মামলাকে পুঁজি করে সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সাগর ও মুখপাত্র সুমি হক বাণিজ্য করছেন। এ সংগঠনের মুখপাত্র সুমি হকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাকে মামলা থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা চালানোরও অভিযোগ করেন মারযুক। তবে মামলা থেকে আসামিদের নাম বাদ দেয়া নিয়ে মারযুকের বাণিজ্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি (মারযুক) বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ নেই’।
এদিকে আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সাগর বলেছেন, মারযুক তার মামলার আসামিদের ঠিকমত চেনে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মারযুক অপ্রমাণযোগ্য, পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন। মুখপাত্র সুমির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ রক্ষার চেষ্টার কোনো প্রমাণ নেই বলে জানান সাব্বির।
এর আগে গত ১৪ মে করা মামলায় আসামির তালিকায় চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, জেলে, কৃষক এবং বিএনপি নেতাদের নাম থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শহরজুড়ে বিতর্ক দেখা দেখা দেয়।
এরপর এ মামলা প্রশ্নবিদ্ধ হলে জেলা কমিটির অন্যান্য নেতারা দায় নেবে না বলে ১৯ মে বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানান জেলা আহ্বায়ক সাব্বির ও মুখপাত্র সুমি হক। এরপর গত মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে বৈছাআ বরিশাল জেলার আহ্বায়ক সাব্বিরসহ চার নেতার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মারযুকের পদ স্থগিত করা হয়।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মারযুক বলেন, ভুল তথ্যের কারণে কিছু নিরীহ লোক মামলায় আসামি হয়েছেন। তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আহ্বায়ক সাব্বির বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। একেকজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন মারজুক।
মারযুক আরও দাবি করেন, এক ছাত্রলীগ নেতার নাম বাদ দিতে তদবির করেছিলেন মুখপাত্র সুমি হক। তিনি (মারযুক) রাজি না হওয়ায় সংগঠনে তার পদ স্থগিত করা হয়েছে।
জামায়াতের দুজন রুকন এবং একজন প্রবাসীকে আসামি করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মারযুক উপযুক্ত কোন উত্তর দিতে পারেননি। জেলা আহ্বায়কের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ জোরালো করতে মারযুক সংবাদ সম্মেলনে জামাল খান নামে এক আসামিকে উপস্থাপন করেন।
এর আগে ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা ১৫ মে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মারযুক ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি মিজানুরকে মামলার আসামি করেছেন। পরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটকে রেখে মিজানুরকে পুলিশে ধরিয়ে দেন মারযুক।
এ অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেছেন, বাদী মারযুক নিজেই তার লোকজন নিয়ে আসামি ধরে পুলিশে খবর দেন। সে বাদী হওয়ায় আসামি থানায় আনতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বৈছাআ জেলা আহবায়ক সাব্বির হোসেন বলেন, ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মারযুক আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন। প্রকৃত অর্থে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা পরিচয়ধারী যে ব্যক্তি (জামাল খান) চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন তাকে আমি চিনিই না। তাছাড়া সংগঠনের মুখপাত্র সুমি হকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাকে রক্ষা করার যে অভিযোগ তুলেছেন তার প্রমাণ দেখাক মারযুক আব্দুল্লাহ। মারযুক যে মামলা করেছেন তার কয়জনকে সে চেনেন সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানে বরিশাল নগরীর চৌমাথা সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রজনতার উপর হামলার অভিযোগে গত ১৪ মে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেন মারযুক।
এ মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ নেতা বরিশাল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২৪৭ জনের নামোল্লেখ ও আড়াইশ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
এরপর গত সোমবার (১৯ মে) বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ। সংবাদ সম্মেলনে সেদিন সাব্বির বলেছিলেন, এ মামলার বিষয়ে আমরা (সংগঠন) অবগত নই। তাই এ মামলা কোন প্রশ্নের সম্মুখিন হলে জেলা কমিটির নেতারা দায় নেবে না। মামলায় নিরাপরাধ কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে নিরাপরাধীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। এরপরই শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে যুক্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে মারযুকের পদ স্থগিত করা হয়।
আরআর