বিভিন্ন গবেষণায় আকাশমণি গাছের পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব উঠে এসেছে। এসব দিক বিবেচনায় ২০০৮ সালে সরকার আকাশমণির চারা উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা মানেনি বনবিভাগ নিজেই। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই গাছের উৎপাদন ও রোপণ কার্যক্রম।
সম্প্রতি পাথরঘাটায় বঙ্গোপসাগর উপকূলে বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে সামাজিক বনায়নের নামে আবারও আকাশমণি রোপণ হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আকাশমণির প্রভাবে আশপাশের নারকেল গাছে ডাব শুকিয়ে যাচ্ছে। এই গাছে কোনো পাখি বসে না, এমনকি আশপাশের অন্য গাছ মরে যায়। কারণ এটি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং আশপাশের মাটির পুষ্টি শোষণ করে নেয়।
এসব দিক বিবেচনায় চলতি বছরের ১৫ মে সরকার ফের আকাশমণি রোপণ, উৎপাদন ও পরিবহন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে এখনো পাথরঘাটা রেঞ্জ অফিসের নার্সারিতে রয়ে গেছে প্রায় ৮০ হাজার আকাশমণি চারা। এসব চারা নিয়মিত পরিচর্যা করছেন বনকর্মীরা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে আকাশমণির দুটি জাত দিয়ে বনায়ন শুরু হয়।
মাত্র ১০ বছরের মধ্যে কাঠ বিক্রিযোগ্য হওয়ায় গাছটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উপকারভোগীরা বিক্রিত কাঠের ৫৫ শতাংশ মূল্য পেতেন। সেজন্য অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশপাশের রাস্তা কিংবা পতিত জমিতে এই গাছ লাগান। ফলে গ্রামীণ এলাকা থেকে শহর পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটে আকাশমণির।
২০১৯ সালের বরগুনা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইউএনডিপি’র অর্থায়নে পাথরঘাটা উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে আকাশমণি বাগান সৃজনের কাজ চলছিল।
সে সময়ের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ওই কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন। গণমাধ্যমের কাছে ওই নথির কপি সংরক্ষিত আছে।
অবসারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. লতিফ খান জানান, সিডরের পর উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ২০০৯ সালে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হয়। ইউএনডিপি’র অর্থায়নে চলা কর্মসূচিতে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটায় প্রায় ২ লাখ ৪৭ হাজার গাছ রোপণ করা হয়, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল আকাশমণি।
সদ্য বদলি হওয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০২৪ সালে পাথরঘাটায় ৯০ হাজার চারা রোপণ করা হয়, যার মধ্যে আকাশমণিও রয়েছে। তিনি বলেন, আকাশমণির ব্যাপক চাহিদা থাকায় বন বিভাগের অনুমতি না থাকলেও চারা উৎপাদন বন্ধ হয়নি।
বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা আজাদুল কবির জানান, সরকার আকাশমণি উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে এখনো বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় নার্সারির চারাগুলো রাখা হয়েছে। নতুন করে চারা উৎপাদন বন্ধ আছে এবং পুরনো চারাগুলো রোপণ করা হবে না।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণা বলছে, আকাশমণি ফুল ফোটার সময় প্রচুর পরিমাণে পুষ্পরেণু সৃষ্টি হয়। এসব রেণু বাতাসে ভেসে মানুষের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে অ্যালার্জি, জ্বর ও অ্যাজমার মতো রোগের কারণ হতে পারে। মাত্র ৩ থেকে ৫০টি রেণু মানুষের শরীরে জ্বরের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)’–এর পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, বিদেশি প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন ধ্বংসকারী গাছ রোপণের বিরোধিতা করা হয়েছিল। তারপরও সরকার সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ক্ষতির দায় নীতিনির্ধারকদেরই নিতে হবে।
এমআর/টিএ