মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খানের ভাই নওয়াব আলী তকী খানসহ পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির ৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে হামলা ভাংচুর, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং সম্মেলন পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ এনে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।
গত রোববার (২৫ মে) উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. রেদওয়ান খান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল হোসেন খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল জলিল জামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ৩ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার সময় বেঁধে দিয়ে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। এদিকে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন- পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খানের ছোট ভাই নওয়াব আলী তকী খান, এমপির ঘনিষ্ঠ আজমল হোসেন চৌধুরী বাতেন, সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাস আলী, বিএনপির সদস্য শেখ মোহাম্মদ আলী ও শামছুল ইসলাম। নোটিশের অনুলিপি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের কাছে প্রেরণ করা হয়।
কারণ দর্শানো নোটিশ ও বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৩ মে) রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিল ছিল। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আকদ্দস আলী মাস্টার, মঈনুল হক বকুল, সুফিয়ান আহমদ, আব্দুল মুক্তাদির মনুসহ নেতারা। একপর্যায়ে অভিযুক্ত পাঁচজন ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খানের পুত্র নওয়াব আলী হাসিব খান ও যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল আহমেদ রব্বানের নেতৃত্বে তাদের বলয়ের নেতাকর্মী এসে কাউন্সিলে বাধার সৃষ্টি ও হামলা করে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে হেনস্তা করা হয়। তারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এর ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং সম্মেলন পণ্ড করে দেন।
এসময় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কাউন্সিলের প্রধান অতিথি আলমগীর হোসেন ভুঁইয়াসহ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা কাউন্সিল স্থগিত করে কুলাউড়ায় ফিরে যান।
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য নওয়াব আলী তকী খান বলেন, ‘যারা বিগত দিনে দলের দুর্দিনে মাঠে রাজনীতি করেছিল তাদের অবমূল্যায়ন করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাউন্সিল আয়োজন করা হয়। বিষয়টি আমরা উপজেলার নেতৃবৃন্দদের অবগত করি এবং আপত্তি জানাই। কাউন্সিলের ব্যানারে বিতর্কিত ব্যক্তির নাম থাকায় ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা ব্যানার নামিয়ে ফেলে।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে বিএনপির সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া সৃষ্ট ঘটনাকে সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খানের পরিবারের লোকজনকে দায়ী করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সাবেক এমপি সাহেবের ভাই আলী তকী খানসহ অভিযুক্ত পাঁচজনের ইন্ধনে ছাত্রদল নেতা আলী হাসিব খান ও যুবদল নেতা রব্বান পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দলীয় ব্যানার নামিয়ে ফেলে। পরে আমরা কাউন্সিল স্থগিত করে ফিরে এসেছি। এরআগেও ইউনিয়ন বিএনপিসহ প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে উপজেলা নেতৃবৃন্দের সভায়ও তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারা চাচ্ছে, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে তাদের পরিবারের আস্থাভাজন বা তাদের বলয়ের লোক দিয়ে কমিটি তৈরি করতে যাতে করে আগামী নির্বাচনে পৃথিমপাশা বিএনপির কার্যক্রম সাংগঠনিকভাবে যেন দুর্বল থাকে। আমরা চাচ্ছি গ্রুপিং/লবিং ভুলে সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটি কমিটি গঠন।’
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল হোসেন খান বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতিতে কোনো বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের জন্য ৫জনকে শোকজ করা হয়েছে এবং ইউনিয়ন বিএনপির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রদল নেতা নওয়াব আলী হাসিব খান ও যুবদল নেতা রব্বানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনের জেলার দায়িত্বশীলদের জানানো হয়েছে।’
এসএম/এসএন