কানাডার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সম্পর্কের উৎস হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং এর ভিত্তি হলো অভিন্ন স্বার্থ, যার লক্ষ্য হলো উভয় সার্বভৌম দেশের জন্য রূপান্তরমূলক সুবিধা নিশ্চিত করা বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস।
প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটিই প্রথমবারের মতো ব্রিটেনের একজন রাজার “সিংহাসন থেকে ভাষণ”, যেখানে রাজার অটোয়ার পার্লামেন্টে আসার সিদ্ধান্তকে কানাডার প্রতি সমর্থনের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়েছে।
ভাষণে তিনি বলেন, কানাডার সরকার বিশ্বজুড়ে তার বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে সম্পর্কে শক্তিশালী করতে কাজ করছে। এটিই বলে দেয় বিশ্বের যা প্রয়োজন এবং বিশ্ব যে মূল্যবোধগুলোকে সম্মান করে কানাডার তা আছে।
তিনি বলেন, “আজ কানাডা আরেকটি সংকটময় সময় মোকাবিলা করছে। গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, আইনের শাসন, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তির মতো মূল্যবোধগুলোর সুরক্ষায় সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
রাজা চার্লস বলেন, অংশীদারদের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কানাডা নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। অনেক কানাডিয়ান উদ্বিগ্ন। এরপরেও এই মুহূর্তটি একটি চমৎকার সুযোগও। নবায়নের সুযোগ। বড় চিন্তা করার এবং বড় দায়িত্ব পালনের সুযোগ। এই নতুন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে কানাডা এখন প্রস্তুত।
রাজা চার্লস ও রানী ক্যামিলা-এই রাজকীয় দম্পতির রাজত্ব শুরুর পর এটাই তাদের প্রথম কানাডা সফর। তারা অটোয়ায় পৌঁছালে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এর পরপরই, দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ও সম্প্রতি ট্রাম্প-বিরোধী জনমতের জোয়ারে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সাথে বৈঠক করেন রাজা চার্লস।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কার্নি রাজাকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান, যেখানে ট্রাম্পের কাছ থেকে কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকির বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
মঙ্গলবারের ভাষণে রাজা চার্লস বলেন, সমমনা দেশগুলোর সাথে জোট গড়তে কানাডা এখন প্রস্তুত, যা তার মূল্যবোধের অংশ, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এবং পণ্য, সেবা ও আইডিয়ার মুক্ত ও খোলা বিনিময়ে বিশ্বাস করে।
কানাডিয়ানরা মহান পরিবর্তনের এই সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যা কানাডাকে অনন্য বানিয়েছে বলেও জানান তিনি। রাজা চার্লস আরও বলেন, রেডিও কানাডার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষা দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা কানাডার প্রকৃতিকে আগের চেয়ে বেশি সুরক্ষা দেবে।
কানাডার বাসস্থান সংকট নিয়েও রাজা তার ভাষণে মন্তব্য করেছেন। এটি এবারের নির্বাচনে দেশটিতে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল। এরপর তিনি আরেকটি বড় ইস্যু- সীমান্ত সমস্যা নিয়েও কথা বলেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছেও একটি বড় ইস্যু। কানাডার পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর অন্যতম কারণও এটি।
রাজা বলেন, কানাডার সীমান্ত শক্তিশালী করতে সরকার আইন করবে। আইন প্রয়োগকারীরা নতুন নতুন উপকরণ পাবেন। সশস্ত্র বাহিনীকে পুনর্গঠন করে সরকার “কানাডার সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা” নিশ্চিত করবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি রাজা চার্লসের সফরকে অত্যন্ত সফল এক সফর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এর আগে সোমবার বিকেলে, রাজা ও কার্নি কানাডার গভর্নর-জেনারেলের বাসভবন রিডো হলে একটি বৈঠক করেন, যেখানে উভয়ই কানাডিয়ান পতাকার সামনে বসে ছিলেন।
এছাড়াও কানাডার আদিবাসী এবং ফার্স্ট নেশনস গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছিল, যার মধ্যে অ্যাসেম্বলি অব ফার্স্ট নেশনস-এর জাতীয় প্রধান সিন্ডি উডহাউসও ছিলেন।
অটোয়ার রোদে বেশ আরামদায়ক পরিবেশেই রাজা একটি বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। উৎসুক দর্শকরা তাকে অভ্যর্থনা জানান, তারা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং রাজার সাথে করমর্দনের জন্য ভিড় জমান। মঙ্গলবারই তারা ব্রিটেনের উদ্দেশে কানাডা ছেড়ে গেছেন।
এসএম/টিএ