বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্যই পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা দেশে আসবে: সারজিস

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। তারা আসবে তাদের অপকর্মের মামলায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য।

দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলা সফরের প্রথম দিনে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলার গাইবান্ধা মোড়সহ বিভিন্ন পথসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, খুনি হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারের উপর মায়ের বুক খালি করেছে। খুনির হাসিনার বিচার বাংলাদেশে হওয়া উচিত। ওই খুনির বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জায়গা থেকে কারো হাতে যেন দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবার চিন্তা না করে। আমরা এই বাংলাদেশে খুনি হাসিনার বিচার দেখতে চাই। জুলাই বিপ্লবে এই বাংলাদেশে যে আশা আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সামনে রেখে তরুণ সমাজ রক্ত দিয়েছে, আমরা সেই সিস্টেমগুলোর সংস্কার দেখতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এমন কোন অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা যেন না বলি। এখন সরকারে যারা আছে তারা সরাসরি কোনো দলের প্রতিনিধি না। তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি । রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শক্রমে তারা সরকারে জায়গা করে নিয়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত দিতে হবে এটা কথা হতে পারে না বরং কথা একটা হতে পারে যে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে বিচার এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে হবে।
বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন, আমরা দেখেছি আগে এমপিরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতো। তারা দলীয় প্রভাবে নির্বাচিত হতো এবং তারা নেতার তেলবাজি করতে গিয়ে জনগণের দিকে খেয়াল করার সময় পাননি। এসব নেতারা নির্বাচনের আগে জনগণের পকেটে ৫ শত বা এক হাজার টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে জনগণকে প্ররোচিত করত। নির্বাচনের পরে সকল সেবা ও সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে হাজার হাজার টাকা জনগণের পকেট থেকে ওই এমপিরা নিয়ে গেছে।

তিনি আগামী নির্বাচনে দল মত না দেখে ভাল মানুষকে নির্বাচিত করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ভালকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলার মানসিকতা নিয়ে খারাপ মানুষকে ছুড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগ আমলের মত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি শুরু হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

তিনি নারী সমাজকে জাতির অর্ধেক অংশ বলে উল্লেখ করে আগামীতে ভাল মানুষকে নির্বাচিত করতে তাদের (নারী)সমর্থন আশা করেন। সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি বিস্তার রোধে তাদের মুখোশ জন-সম্মুখে প্রকাশ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

সরকারি যত বড় আমলায় হোক, যারা জনগণকে ভয় দেখায়, অন্যায় করলে তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। বিগত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া হয়েছে, অথচ ওটাই ছিল দুর্নীতির আখড়া বলে উল্লেখ করেন সারজিস।

বিগত সময়ে হাসিনা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছেন এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন দেখেছি একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা একই ভাষা ব্যবহার করছেন। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। যে ভাষায় এতদিন আপনাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, সেই ভাষার চর্চা এখন শুরু করলে, জনগণ তাদের ছুঁড়ে ফেলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আপনারা যদি ওই সংস্কৃতি প্রয়োগ করেন, তাহলে আপনারা অন্য কারো দ্বারা এটার শিকার হবেন, কিন্তু এই তরুণ প্রজন্ম সেই সংস্কৃতি আর চলতে দিবে না।

তিনি এসব নেতাদের উদ্দেশ্য বলেন, কথা বলার সময় সাবধানে কথা বলবেন, আপনাদের ভাষা ঠিক করুন, কারণ আপনারা আমাদের মুরুব্বি । আপানারা আমাদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা বা সম্মান পাবেন।

আগামীতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্পর্কের বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা এবং ভালোর সাথে থেকে খারাপকে তিরস্কারের আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, আলী নাছের খান, সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিওন ও ঘোড়াঘাট উপজেলা এনসিপির আহ্বায়ক মো. আব্দুল মান্নান সরকারসহ প্রমুখ।

এফপি/ এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

দ্বীনভিত্তিক সমাজ গঠনে শিক্ষা ও সংগঠন জোরদারের তাগিদ জামায়াতের Jun 01, 2025
সৌদির ওয়ার্ক ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশসহ ১৪ দেশ Jun 01, 2025
দুর্নীতির জব্দ অর্থই হতে পারত বাজেটের গেম চেঞ্জার Jun 01, 2025
গভর্নরের কথায় আতঙ্কিত ব্যাংক খাত, ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন Jun 01, 2025
img
সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে গ্রাহকরা পাবেন নতুন টাকা Jun 01, 2025
নাহিদকে নিয়ে ‘ফরমায়েশি রিপোর্টিং’, তীব্র প্রতিবাদ এনসিপির Jun 01, 2025
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী! Jun 01, 2025
img
প্রজাপতি ২ থেকে সরে দাঁড়ালেন ইধিকা? মুক্তি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন Jun 01, 2025
img
নগদ অফিসে আবারও দুদকের অভিযান Jun 01, 2025
img
দেবীপক্ষেই দেবীর আগমন, পুজোতেই ফিরছেন ‘দেবী চৌধুরানী’ Jun 01, 2025
img
অনুমতি ছাড়া হজ পালন সম্পর্কে সৌদির গ্র্যান্ড মুফতির মন্তব্য Jun 01, 2025
img
দামি কাপেই সকালের চা, নীতা আম্বানির পছন্দের নামী ব্র্যান্ড Jun 01, 2025
img
বাংলাদেশে বিনিয়োগে চীনা উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান Jun 01, 2025
img
ঈদ উপলক্ষে র‍্যাবের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা Jun 01, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টা দেশে, আজই সিদ্ধান্ত চান সচিবালয়ের বিক্ষোভকারীরা Jun 01, 2025
img
তপ্ত মরুতে নিরব-ইধিকার রোমান্স! Jun 01, 2025
img
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার যানজট Jun 01, 2025
img
পিএসজি ভক্তদের বেপরোয়া উদযাপন,আটক ২৯৪ জন Jun 01, 2025
img
ঈদ স্পেশাল ট্রেনে বিলম্ব, ৫টি ট্রেন দেরিতে Jun 01, 2025
img
বিদ্যুৎ নেই, বাজার বন্ধ—চরম দুর্ভোগে সেন্ট মার্টিনবাসী Jun 01, 2025