গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা নিয়ে পিআইবি-তে সংলাপ: “সংস্কার ছাড়া ভবিষ্যৎ অন্ধকার”

নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার চক্রে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোচ্ছে—এমন প্রশ্নকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

শনিবার (৩১ মে) বিকেলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর সভাকক্ষে আয়োজিত এ আয়োজনে অংশ নেন গবেষক, শিক্ষক, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা।

উক্ত সভা আয়োজন করে গবেষণা সংস্থা ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালেটিকস (দায়রা)। মূল ভাবনাপত্র পাঠ করেন লন্ডনের SOAS ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক এইচ. খান। তিনি বলেন, “শুধু আইন ও সংবিধানের কিছু ধারা বদলালেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। দরকার ক্ষমতার নতুন ভারসাম্য, যেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।” তার মতে, দীর্ঘ সময়ের দলীয় শাসন ও দুর্নীতির কারণে দেশের মূল প্রশাসনিক কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে।

পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ আলোচনায় বলেন, “রক্তপাত ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ চাইলে আমাদের আজই সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে।”
নারী অধিকার কর্মী শিরিন হক বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষ, বিশেষ করে নারী ও তৃণমূল জনগোষ্ঠী সম্মান ও অধিকার পাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফল হক মনে করিয়ে দেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে না পারলে কাঠামোগত পরিবর্তন অসম্ভব।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, “অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষের দিকে কিছুটা ভার সরানো ছাড়া টেকসই পরিবর্তনের আশা করা বৃথা।”

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “আমাদের সংস্কারের প্রতিটি প্রচেষ্টা বিভিন্ন স্তরে বাধার মুখে পড়ছে, এটা হতাশাজনক।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, “আমাদের ইতিহাস কেবল শোক নয়, সংগ্রামেরও। সেটাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিতে পারে।”
অধ্যাপক ড. রুবাইয়া মোর্শেদ ও সাংবাদিক জিনা তাসরিন মনে করেন, এককভাবে নয়—সম্মিলিতভাবে কাজ করলেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান।
সমাপনী বক্তব্যে দায়রার পক্ষে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সময়টা ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও রাষ্ট্রচর্চার নতুন কাঠামো কল্পনা করার উপযুক্ত মুহূর্ত।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর সোবহান, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির এহতেশাম হক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাদাব মুবতাসিম প্রান্তিক ও মুনিম মুবাসশিরসহ নানা পেশার প্রতিনিধিরা।

এই সংলাপে উঠে আসে একটাই স্পষ্ট বার্তা—যদি আমরা রাষ্ট্রকে বদলাতে চাই, তাহলে আমাদের সাহস করে নতুন কাঠামো ভাবতে হবে এবং সেটার জন্য লড়াই করতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আজ বিদায়ী অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি Dec 14, 2025
img
টঙ্গীতে বিকাশকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি, প্রায় ১৫ লাখ টাকা ছিনতাই Dec 14, 2025
img
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা Dec 14, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডে ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলিতে নিহত ২ ও আহত ৮ Dec 14, 2025
img
সুদানে শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ঢাকার Dec 14, 2025
img
১৪ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 14, 2025
img
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা Dec 14, 2025
img

লা লিগা

রাফিনিয়ার জোড়া গোলে ওসাসুনাকে উড়িয়ে দিল বার্সেলোনা Dec 14, 2025
ওমান উপসাগরে ট্যাংকার জব্দ ইরানের, বাংলাদেশিসহ আটক ১৮ Dec 14, 2025
খরচ বাঁচাতে গিয়ে বিমানবন্দরে বিপদ ডেকে আনল শীর্ষ এয়ারলাইন ইন্ডিগো Dec 14, 2025
'বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস পালনে ঢাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে' Dec 14, 2025
রিজভীর বক্তব্যে জামায়াতের প্রতিবাদ, ডিএমপির সতর্কবার্তা Dec 14, 2025
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে ষড়যন্ত্র থামানো যাবে: তারেক রহমান Dec 14, 2025
৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দিলে পুলিশ রাখার দরকার কি? Dec 14, 2025
ডেভিল হান্ট ফেইজ ২ চালু হচ্ছে- হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার Dec 14, 2025
img
আজ থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হবে সোনা Dec 14, 2025
img
বাবা হওয়ার দিনে বিষাদের গল্প শোনালেন যুবদলের নয়ন Dec 14, 2025
img
হাদির ঘটনায় ফয়সাল করিমের সহযোগী মোটরসাইকেল চালকের পরিচয় শনাক্ত Dec 14, 2025
img
ফাইল তন্নতন্ন করে খুঁজেও মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি : রাহাত আরা বেগম Dec 14, 2025
img
সরকার চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুর্বৃত্তদের ধরতে পারে: রুমিন ফারহানা Dec 14, 2025