দিনাজপুরের বিখ্যাত বেদানা লিচু এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে লিচুটির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, ফলে বাজারে বেচাকেনাও বেড়েছে। তবে সরবরাহ বেশি থাকায় এই লিচু বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতিটি ৬ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, জিআই স্বীকৃতি না পেলেও আকারে বড় ও স্বাদে ভালো হওয়ায় চাহিদায় এগিয়ে রয়েছে চায়না-থ্রি জাতের লিচু। বাজারে এই জাতের একটি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায়, যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
সোমবার (২ জুন) দিনাজপুরের প্রধান লিচুর বাজার শহরের কালিতলা নিউ মার্কেট বাজারে বিভিন্ন জাতের প্রচুর লিচুর আমদানি হয়েছে। বিক্রেতারা কেউ রিকশাভ্যানে, কেউ ইজিবাইকে, কেউ ভটভটিতে, আবার কেউ লিচু নিয়ে এসেছেন পিকআপ ভ্যানে। বিক্রেতা আর ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত লিচুর বাজার। গোটা বাজারে যেন তিলধারণের ঠাঁই নেই।
বাজারে ঢুকেই দেখা যায়, দোকানে লিচুর বিশাল স্তূপ, আর এক আঁটি চায়না-থ্রি জাতের লিচু হাতে নিয়ে লিটন আলী নামে এক বিক্রেতা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘দামাদামি করলে দুই হাজার টাকা, আর না করলে ১৮শ টাকা। এর কম হবে না’। একশ লিচুর দাম এটি। অর্থাৎ চায়না-থ্রি জাতের একটি লিচুর দাম ১৮ টাকা।
লিটন আলী জানান, বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের বাগান মালিক খুরশেদ আলমের কাছ থেকে তিনি চায়না-থ্রি জাতের ৬ হাজার লিচু কিনেছেন ৯০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি লিচুর দাম পড়েছে ১৫ টাকা। পরিবহণ খরচ, খাজনাসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে ১৮ টাকার নিচে বিক্রি করলে তার লোকসান হবে। এজন্যই তিনি প্রতিটি লিচু ১৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
পাশের আরেক বিক্রেতা রুবেল রানা বেদানা জাতের লিচু বিক্রি করছেন আকারভেদে প্রতিটি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে। তিনি বলেন, আজ (সোমবার) বাজারে লিচুর সরবরাহ বেশি। তাই দাম কিছুটা কম। পরবর্তীতে আরও দাম বাড়বে বলে জানান রুবেল রানা।
বিক্রেতারা দাম কমের কথা বললেও ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি। বাজারে লিচু কিনতে আসা আব্দুস সাত্তার নামে এক ক্রেতা জানান, তিনি ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে লিচু পাঠাবেন। বেদানা জাতের ৫শ লিচু কিনলেন ৯ টাকা দরে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি চায়না-থ্রি জাতের লিচু আকার ও মানভেদে ১০ টাকা থেকে ১৮ টাকা দরে, বেদানা জাতের লিচু ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে এবং মাদ্রাজি ও বোম্বাই লিচু আড়াই টাকা থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কালিতলা ফল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুস্তম আলী জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার বাজারে প্রচুর পরিমাণে লিচুর আমদানি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টির পর আকাশে রোদ থাকায় এবং কুরবানি ঘনিয়ে আসায় বেড়েছে এই লিচুর আমদানি।
তিনি বলেন, এই বাজারে লিচুর আড়ত রয়েছে ৩৮টি। এছাড়াও ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক দোকানে লিচু বিক্রি হয়ে থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে এ বাজারে লিচু বেচাকেনা শুরু হয়েছে, চলবে আষাঢ় মাস পর্যন্ত। বর্তমানে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন এ বাজারে বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৫০ লাখ লিচু। শুধুমাত্র এই বাজারেই প্রতিদিন গড়ে বেচাকেনা হচ্ছে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার লিচু। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এই বাজারে এসেছেন লিচু কিনতে। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান রুস্তম আলী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৯ হাজার ৯৮টি। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে অন্তত ৭শ কোটি টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
আরএ/টিএ