মহাত্মা গান্ধী: অহিংস আন্দোলনের পথিকৃৎ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বৃটিশ বিরোধী অহিংস নীতি এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথিকৃৎ। তাকে “ভারতের জাতির জনক” বলা হয়। কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বব্যাপী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক মহাত্মা গান্ধী।

তিনি বলতেন, “যখন হতাশা কাজ করতো, আমি স্মরণ করতাম যে ইতিহাসে সব সময় সত্য এবং ভালবাসার জয় হয়েছে। অত্যাচারী ও খুনীরা সাময়িকভাবে অপরাজেয় মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পতন অনিবার্য”।

তার পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর বৃটিশ ভারতের পোড়বন্দরে তার জন্ম। তার মা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। মায়ের প্রভাবে গান্ধীর চরিত্রেও ধর্মীয় চেতনার প্রভাব পড়ে। শৈশবে অত্যন্ত লাজুক ছিলেন।

বাবার মৃত্যুর পর আইন নিয়ে পড়তে ইংল্যান্ড যান। সেখানে তিনি “ভেজিটারিয়ান সোসাইটি” এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাকে হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ সংস্কৃত “ভাগবত গীতা” অনুবাদ করতে অনুরোধ করা হয়। এটা করতে গিয়ে তিনি ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে গর্ব অনুভব করেন।

এ সময় তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করেন। নম্রতা এবং ক্ষমার ব্যাপারে যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। হিন্দু ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মের কিছু কিছু দিক নিয়ে সমালোচনা করলেও তিনি বাইবেল ও গীতার প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

আইন বিষয়ে ডিগ্রি শেষ করার পর গান্ধী ভারতে ফিরে আসেন এবং আইন অনুশীলন করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যান।

সেখানে ভয়াবহ জাতিগত বৈষম্য এবং অত্যাচার দেখে তিনি মর্মাহত হন। এ অবস্থা তিনি ভারতেও দেখেছিলেন। নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি তার প্রতিবাদের এই অহিংস আন্দোলনকে “সত্যাগ্রহ” নামে অভিহিত করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২১ বছর কাটানোর পর, গান্ধী ১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে আসেন। ভারতে এসেই তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে তিনি “স্বরাজ” আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি ভারতে অহিংস আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। তার আন্দোলন ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ কিন্তু এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। তাই তাকে প্রতিহত করার কোনো সুযোগ পায়নি বৃটিশ শাসক।

ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু এবং অরিবিন্দ ঘোষসহ অনেকেই সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে ছিলেন। তবে অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ দাবি প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন গান্ধী।

সশস্ত্র সংগ্রামের বিপরীতে ধর্মঘট এবং অসহযোগিতার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

১৯৩০ সালে বৃটিশরা লবণ আইন প্রণয়ন করলে এর বিরুদ্ধে লংমার্চ করেন গান্ধী। এ আন্দোলন থেকে হাজার হাজার স্বাধীনতা আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে বৃটিশ শাসক।

এ সময় ভারতীয়রা বেশ কয়েকজন বৃটিশকে হত্যা করলে অহিংস আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য আন্দোলন থেকে অব্যাহতি দেন গান্ধী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলমানদের সমর্থন দিয়ে বৃটিশরা ভারতকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই ভাগে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে গান্ধী এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। তার বিশ্বাস, হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ই শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে থাকতে পারবে।

গান্ধী সত্যের সন্ধানকারী ছিলেন। সত্যের সন্ধানে তিনি জৈন, ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং নিজের দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভালবাসতেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসাবে ধর্মীয় অভ্যাস ও উপবাস ব্যবহার করতেন।

গান্ধীর অনুষ্ঠানে হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিস্টান সবাই থাকত। তিনি একটি অসাম্প্রদায়িক ভারত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। তাই ভারত ভাগ ঠেকাতে অনেক চেষ্টাও করেছেন। জিন্নাহর কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

হিন্দু ধর্মের জাত প্রথার চরমবিরোধী ছিলেন গান্ধী। হিন্দুদের বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদ করে তিনি অনেকগুলো প্রচারাভিযান চালিয়েছেন।

হিন্দুদের জাতপ্রথার প্রতিবাদ এবং মুসলিমদের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য মৌলবাদী হিন্দুদের কাছে তিনি শত্রুতে পরিণত হন।

ফলে ভারতের স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৪৮ সালে জনৈক হিন্দু ব্রাহ্মণের আঘাতে এই মহান ব্যক্তি মারা যান।

তার আত্মজীবনী- “দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ”।

 

ইন্টারনেট অবলম্বনে লিখেছেন এনামুল হক।

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানকে পাকাপোক্ত করতে হবে’ Sep 18, 2025
img
পাইক্রফটকে ‘ভারতের প্রিয় ম্যাচ রেফারি’ বললেন রমিজ রাজা Sep 18, 2025
img
পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি Sep 18, 2025
img
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যাক : ঐশী Sep 18, 2025
img
প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব : তারেক রহমান Sep 18, 2025
img
দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন নাহিদ Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশে সবচাইতে আগে জরুরি জাতীয় নির্বাচন : জিল্লুর রহমান Sep 18, 2025
img
মেটা উন্মুক্ত করলো নতুন ডিসপ্লে স্মার্ট গ্লাস Sep 18, 2025
img
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল: বার্নি স্যান্ডার্স Sep 18, 2025
img
ঢাকায় আজ বিক্ষোভ করবে জামায়াতসহ ৭ দল Sep 18, 2025
img
জয়পুরহাটে ছাত্রদলের সম্মেলন ব্যর্থ, ৭ নেতাকে বহিষ্কার Sep 18, 2025
img
তোমার অভাব প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করি: অপু বিশ্বাস Sep 18, 2025
img
আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড Sep 18, 2025
img
সমুদ্রে পাওয়া গেল ৮ ধরনের ভারী খনিজ Sep 18, 2025
img
‘ডাইরেক্ট থ্রোতে’ মাথায় বল লেগে মাঠের বাইরে আম্পায়ার Sep 18, 2025
img

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা সভা

‘বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি আমাদের মানতে হবে, বুঝতে হবে’ Sep 18, 2025
img
ঢাবির পরিবহনে ডিজিটাল রূপান্তর, চালু হচ্ছে বাস ট্র্যাকিং অ্যাপ Sep 18, 2025
img
অস্কারের সমালোচনায় এমি পোলার Sep 18, 2025
img
আলভারেজ বিতর্কের পর ফুটবলে পেনাল্টির নিয়মে বড় পরিবর্তন Sep 18, 2025
img
৩ বছর পরে হাবিবের জন্য নতুন গান লিখলেন অলিক Sep 18, 2025