পুশইন করে ভারত বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় : কাদের গনি

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন , বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত `পুশইন' কৌশল বেছে নিয়েছে। বাংলাভাষী ও রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক পুশইন করে ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন , জোরপূর্বক এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

মঙ্গলবার (০৩ জুন) দুপুরে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত অবৈধ পুশইন বন্ধ এবং সার্বভৌমত্ববিরোধী করিডোর প্রদান বন্ধের দাবিতে আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশে পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারত। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে বাংলাদেশ চিঠি দিলেও মোটেই তা আমলে নিচ্ছে না ভারত সরকার। এ ছাড়া বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হলেও চোরাপথে বা বিজিবির অগোচরে পুশইনের ঘটনা বেড়ে চলছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ভারত পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধাতে চায়।

তিনি বলেন , শুধু পুশইন নয়, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করা হয়েছে। সেখানে হাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেটি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটা অগ্রহণযোগ্য।

সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারতের আচরণ বরাবরই আক্রমণাত্মক। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। আপনাদের নিশ্চয় ফেলানির কথা মনে আছে। বাংলাদেশি এই মেয়েটাকে হত্যা করে সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন শুরু হয়েছে সীমান্ত দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে পুশইন করা। এছাড়াও তারা বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র সরবরাহ করে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন , একটি দেশের কোনো নাগরিক আরেকটি দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে তাকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইনকানুন, রীতিনীতি অনুসরণ করে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু কোনো ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ভারত এক প্রকার গায়ের জোরে এ মানুষগুলোকে বাংলাদেশে পুশইন করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থি। এখনো সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে পুশইনের জন্য অসংখ্য মানুষকে জড়ো করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে বিএনপি সরকারকে বিরত করতে ২০০২-০৩ সালের দিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ভারত থেকে প্রায়ই এ ধরনের পুশইনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপর ভারতের সেবাদাস হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকাংশে পুশইন বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি আবারও ভারত কর্তৃক পুশইন করা শুরু হলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পুশইনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন , বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ভারতের অনুগত সরকারের পতনের পর ভারত নানাভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পুশইন সেই পদক্ষেপেরই অংশ। আদালতের রায় ছাড়া কাউকে ঠেলে পাঠানো বেআইনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলাও হয়। এটি ভারতের অতি বাড়াবাড়ি। বাংলাদেশের জনগণ কি এত দুর্বল? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশ, যে জাতি ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীনতা আর দেড় হাজার শিশু-কিশোরের রক্তের বিনিময়ে মাত্র কদিন আগেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করল, সে জাতিকে দুর্বল করে দেখা ঠিক না। ভারত যদি মনে করে তাদের দেশে অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি বসবাস করছে, তাহলে সেই মানুষকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আইনসম্মত যে প্রক্রিয়া আছে, তা অনুসরণ করে দুই দেশের সম্মতিতে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের সম্মতি না নিয়ে যে কাউকে পুশইন করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন , পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের গায়েবি অভিযোগ তুলে ভারতের বাড়াবাড়িও চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছে প্রতিবেশীরা। ক্ষমতার পালাবদলের পর এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন চলছে বলে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তারা নানারকম প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে তালেবান সরকারের উত্থানের মতো সব অযৌক্তিক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, উসকে দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতাকে। প্রতিবেশীদের মূল লক্ষ্য হলো- বিশ্বে বাংলাদেশকে নেতিবাচক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে যে ধরনের আলোচনা হচ্ছে তা অত্যন্ত পরিকল্পিত। এটি দুই দেশের কারও জন্য সুখকর হবে না।

ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের আহ্বানের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ ধরনের চিন্তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে ভারতের যে দৃষ্টিভঙ্গি- তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। এ ধরনের কোনো চিন্তাও তাদের মধ্যে থাকা উচিত হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। এ দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এই ধরনের চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াবে।

‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলবে।

বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন , দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপোষ করা চলবে না। তিনি বলেন, পুশইনের জবাব হচ্ছে পুশব্যাক। ভারতকে আমরা যেভাবে জবাব দেওয়া দরকার সেটি পারছি না। একইভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না।

প্রফেসর ড. সুকোমল বডুয়া বলেন , আইনবহির্ভূতভাবে পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারত। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।

বিচারপতি আবদুস সালাম মামুনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান, কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মফিজুর রহমান, অধ্যাপক এম শাহজান সাজু, ড. নাসির আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোস্তফা আল ইযায।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫৪ বছরে মানুষ বহু ধোকা খেয়েছে, এবার ধোকাবাজকে না বলুন: ডা. শফিকুর রহমান Nov 08, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী আইন দেখতে চায় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম: ড. দেবপ্রিয় Nov 08, 2025
img
‘কালমেগির’ পর ফিলিপাইনে এবার ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘ফাং-ওয়ং’ Nov 08, 2025
img
আবারও ভেস্তে গেল পাকিস্তান-আফগান শান্তি আলোচনা Nov 08, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর পর্দায় ফিরছেন আনুশকা শর্মা Nov 08, 2025
img
শিক্ষকদের আন্দোলনে পড়াশোনার ক্ষতি হলে কঠোর ব্যবস্থা : গণশিক্ষা উপদেষ্টা Nov 08, 2025
img
ডেনমার্কে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া Nov 08, 2025
img
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার Nov 08, 2025
img
ক্রিস্তিয়ানো সর্বকালের সেরা নয়, তবে শীর্ষ ১০-এ আছেন: রোনালদো নাজারিও Nov 08, 2025
img
আরও ১৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইসির Nov 08, 2025
img
প্রয়াত গায়ক জুবিনের স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি Nov 08, 2025
img
আ. লীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৪৫ Nov 08, 2025
img
বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের নতুন ২ সামরিক স্থাপনা Nov 08, 2025
img
বিনিয়োগ আনতে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন: নৌপরিবহন উপদেষ্টা Nov 08, 2025
img
ইউএস শাটডাউন ও এআই বাবল উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারের মিশ্র প্রবণতা Nov 08, 2025
img
সোলজার সিনেমায় শাকিব খানের আসল গোঁফ নিয়ে চমক! Nov 08, 2025
img
দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্তিতে কারও সাথে আপস করবে না জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান Nov 08, 2025
img
বয়সকে ছাড়িয়ে অ্যাশেজের লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত হ্যাজেলউড-লায়নরা Nov 08, 2025
img
মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসির মাহফিল স্থগিতের ঘোষণা Nov 08, 2025
img
খাদ্যগ্রহণে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ Nov 08, 2025