লস অ্যাঞ্জেলেসের ইস্যুতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রশাসনের মামলা

রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিক্ষোভ কবলিত লস অ্যাঞ্জেলেসে হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনা সদস্যকে মোতায়েন করায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজ্য প্রশাসন।

সোমবার রাজ্যের রাজধানী সান ফ্রান্সিসকো শহরের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মার্কিন সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও সেনা মোতায়েন করতে পারেন না এবং ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্যপ্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড ও সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে ট্রাম্প সংবিধান বহির্ভূত কাজ করেছেন।

সেই সঙ্গে দাবি জানানো হয়েছে যে বর্তমানে ন্যাশনাল গার্ড এবং মেরিন বাহিনীর যেসব আধা সামরিক ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, তারা যেন এই বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ট্রাম্পের পরিবর্তে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলেন।

মামলা দায়েরের পর ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল রব বনতা সাংবাদিকদের বলেন, “লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত অপ্রয়োজনীয়, বিপরীতমুখী এবং সর্বোপরি আইন বহির্ভূত।”

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসন উচ্ছেদ এবং নথিবিহীন অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ট্রাম্প। তার পর থেকে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অভিযান শুরু করে পুলিশ এবং মার্কিন কাস্টমস বিভাগের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আইসিই।

তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় প্রধান শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিযানে নামে পুলিশ এবং আইসিই। প্রসঙ্গত, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসী আছেন। এদের অধিকাংশই মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। সাধারণত শহরতলী এলাকাগুলোতে তারা থাকেন।

গত ৬ জুন শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলী এলাকা প্যারামাউন্টে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে অভিযানে নামেন পুলিশ ও আইসিই সদস্যরা। তবে অভিযানের শুরুতেই তারা ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। প্যারামাউন্টের বাসিন্দারা তীব্র বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, বোতল ও মলোটভ ককটেল বা পেট্রোল বোমা ছুড়তে থাকেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে পরের দিন পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সহায়তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আধা সামরিক বাহিনী হাজার ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্যকে মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পরিবর্তে সংঘাত আরও বাড়তে থাকে।

এই অবস্থায় গতকাল সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং তাদের সঙ্গে ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প।

আজ চার দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলেস। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রথম দফায় যখন লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের পাঠিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সে সময়েই এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। সে সময় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য ও ৭০০ মেরিন সেনাসদস্য নামানোর পর সানফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে এ মামলা করল ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য প্রশাসন।

মামলার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি সিএনএনকে বলেছেন, “নিউসাম নিজের মুখ বাঁচানো বা আত্মসম্মান রক্ষার জন্য এই মামলা করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে রাষ্ট্রের প্রয়োজন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার থেকে নিজের আত্মসম্মানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।”

এদিকে নিউসাম জানিয়েছেন, ট্রাম্প যদি ন্যাশনাল গার্ড ও সেনাদের প্রত্যাহার করেন, তাহলে তিনিও মামলা তুলে নেবেন।

সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্পের উদ্দেশে নিউসাম বলেছেন, “এই সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করার ক্ষমতা আপনার আছে। দয়া করে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন।”

সূত্র : সিএনএন

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্থগিতের শঙ্কায় ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ Nov 18, 2025
img

জিল্লুর রহমান

অপরাধের শাস্তি দরকার সেই বিষয়ে দেশের মানুষের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই Nov 18, 2025
img
পা হারানো মানুষদের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে আজ Nov 18, 2025
img
পারমাণবিক সক্ষমতার পথে সৌদি, পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘খুবই উদ্বেগজনক’: শশী থারুর Nov 18, 2025
img
ছেলে দেখে না, অচেনা মানুষেরা খেতে দেয় যুবরাজের বাবাকে Nov 18, 2025
img
১৮ ডিসেম্বর মেহজাবীনের জবাব দাখিলের নির্দেশ আদালতের Nov 18, 2025
img
বুধবার ইসির সংলাপে আসছে বিএনপি ও জামায়াত Nov 18, 2025
img
সাভারে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারখানায় লুটের চেষ্টার অভিযোগ Nov 18, 2025
img
মাদারীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মশাল মিছিল Nov 18, 2025
img
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার উত্থান ও পতন Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রায়ের পর মীর কাসেম আলীর মেয়ের আবেগঘন দীর্ঘ স্ট্যাটাস Nov 18, 2025
img
দেড় বছরে এত সাফল্য অর্জন অন্তর্বর্তী সরকারের মতো কেউ করতে পারেনি: প্রেস সচিব Nov 18, 2025
img
সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাই শামীম গ্রেপ্তার Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা কমে গেছে: আইসিজি Nov 18, 2025
img
মজলুমের দোয়া আজ কবুল হলো : শামারুহ মির্জা Nov 18, 2025
img
কারিগরি বোর্ড : ডুপ্লিকেট ভর্তি চিহ্নিতদের ভর্তি বাতিলের নির্দেশ Nov 18, 2025
img
কঙ্গোতে অবতরণের সময় বিমানে আগুন Nov 18, 2025
img
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড মালিকের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা Nov 18, 2025