মাসখানেক আগেই গৌরী খানের রেস্তরাঁয় ভেজাল পনির বিক্রি করার অভিযোগ তুলেছিলেন জনৈক ইউটিউবার। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিতর্কের ঝড় ওঠে। অনেকেই বয়কট রব তুলেছিলেন সেসময়ে। তবে পরবর্তীতে দেখা গেল, আদতে শাপে বরই হয়েছে। ‘নকল পনির’ বিতর্কের পর থেকে ক্রমশ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ব্যবসা। শুধু তাই নয়, বাদশাপত্নীর রেস্তরাঁর মুখ্য রাঁধুনি জানিয়েছেন, বিগত কয়েক মাসে নাকি তাদের সোশাল মিডিয়ায় অনুসরণকারীর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
চব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেম দিবস উপলক্ষে মুম্বইবাসীকে রাজপ্রাসাদের মতো রেস্তরাঁ উপহার দিয়েছিলেন শাহরুখপত্নী তথা খ্যাতনামা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গৌরী খান (Gauri Khan Restaurant)। সাধ করে নাম রেখেছেন ‘তরী’। রেস্তরাঁয় প্রবেশ করলে আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। আর খাবারের গুণগত মান নিয়ে সেই সেলিব্রিটি রেস্তরাঁই কিনা কাঠগড়ায় ওঠে গত এপ্রিল মাসে। তরীতে নকল পনির পরিবেশন করার অভিযোগ তোলেন মুম্বইয়ের জনপ্রিয় ফুড ব্লগার সার্থক সচদেব। তার পর থেকেই নেটপাড়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় গৌরী খানের সাধের রেস্তরাঁকে।

সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সার্থকের দাবি , তরীতে নকল পনির পরিবেশন করা হয়। সার্থক বরাবরই মুম্বইয়ের জনপ্রিয় সেলেব রেস্তরাঁগুলিতে ঢু মেরে তাদের খাবারের মান নিয়ে রিভিউ দেন। এর আগে বিরাট কোহলি, ববি দেওল, শিল্পা শেট্টি প্রত্যেকের রেস্তরাঁতে গিয়েই পনিরের গুণগত মানের পজিটিভ রিভিউ দিয়েছিলেন। তবে গৌরীর রেস্তরাঁয় পরিবেশিত পনিরের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তার চক্ষু চড়ক গাছ! সার্থক সচদেব যে ভিডিও শেয়ার করেছিলেন সেখানে দেখা যায়, তরীতে পরিবেশিত পনিরের উপর আয়োডিন ফেলে পরীক্ষা করতেই তিনি দেখেন সাদা পনির পুরো কালো হয়ে গেল। এই পরীক্ষা সাধারণত স্টার্চের উপস্থিতি শনাক্ত করতেই ব্যবহৃত হয়। আয়োডিনের সংস্পর্শ এলে পনির কালো কিংবা নীল হয়ে যায়। গৌরীর রেস্তরাঁয় দেওয়া পনিরেরও সেই হালই হয়েছিল। যা দেখে হতবাক হয়ে যান ওই ইউটিউবারও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “শাহরুখ খানের রেস্তরাঁয় নকল পনির পরিবেশন হয়। দেখে তো আমি হতবাক হয়ে গেলাম।” তবে ওই ভিডিওতেই বাকি সেলেবদের রেস্তরাঁয় পরিবেশিত পনিরকে ভালো বলে দাবি করেছিলেন তিনি। কারণ তাঁর আয়োডিন পরীক্ষায় সব ক’টা রেস্তরাঁই পাশ করেছিল। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই নেটপাড়ায় মারাত্মক শোরগোল শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কারি কারি টাকা নিয়ে কেন ভেজাল খাবার খাওয়াচ্ছেন গৌরী? যদিও বিতর্কের জেরে আখেড়ে লাভই হয়েছে। একলাফে বেড়েছে তরীর ব্যবসা। এবার সেই প্রেক্ষিতেই মুখ খুললেন গৌরীর রেস্তরাঁর হেড শেফ স্তেফান গাডিট।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শেফ জানান , “আসলে আমরা যখন ভিত্তিহীন কোনও বিষয়ের উপর আঙুল তুলি, তখন তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। আমরা এখানে যেরকম উপাদেয় উপকরণ দিয়ে তৈরি ভালো মানের খাবার পরিবেশন করি, সেটা সবথেকে উচ্চমানের। তাই আমাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। এখানে কীভাবে কাজ হয়? সাধারণ মানুষকে সেসব জানাতেই আমরা বিবৃতি জারি করেছিলাম। এখন তো ফুড সায়েন্স, খাবারের রসায়ন বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হয়। আমাদেরও চার বছর লেগেছিল তৈরি করতে। ওই ইউটিউবার আসলে পরিষ্কার মনেই খাবারের মান যাচাই করতে এসেছিলেন। আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছি কুলিনারি ওয়ার্ল্ডে (রন্ধনসম্পর্কীয় বিশ্ব) কীভাবে কাজ হয়, কীভাবে ফুড সায়েন্সকে কাজে লাগানো হয়। ও আমাদের কথা বুঝতে পেরে নিজের প্রোফাইল থেকে পরে ভিডিওটি সরিয়ে নেয়। আর রেস্তরাঁর কর্মী হিসেবে আমরা জানি, মানুষ আজকাল বড় বুদ্ধিমান, তারা বোঝে কোথায় কী চলছে? শুধু তাই নয়, এই ঘটনার পর নিত্যদিন আমাদের সোশাল মিডিয়ার ফলোয়ারও বেড়ে চলেছে।” এর আগে যদিও নয়ডার পুষ্টিবিদ কিরণ সোনিও সেই একই কথা বলেছিলেন যে, আয়োডিন টেস্ট পনির নকল কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে পারে না। এদিকে ভিডিওটি তুলে নেওয়ার পর নেটপাড়ার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সার্থককেও। একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তাহলে বিক্রি বাড়নোর জন্য এটা শুধুই ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’?
কেএন/টিএ