‘হাউসফুল ৫’ সিনেমাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। যেখানে একে শুরুতে বলা হয়েছিল একটি পারিবারিক মজার ছবি, বাস্তবে সেটি হয়ে উঠেছে বলিউডের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম অশালীন ও সংবেদনশূন্য সিনেমা। বিশেষ করে এই ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখা নবাগত সৌন্দর্য্য শর্মাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা নিয়ে উঠেছে প্রবল সমালোচনা।
সৌন্দর্যার বলিউড অভিষেক হলেও, তাঁর প্রতিভা দেখানোর সুযোগ না দিয়ে তাঁকে দেখানো হয়েছে শুধুমাত্র সৌন্দর্য্যের প্রদর্শন হিসেবে। তাঁর সংলাপ প্রায় নেই বললেই চলে, স্ক্রিনে সময়ও খুব কম। ছবির পুরুষ চরিত্ররা তাঁকে যেভাবে চোখের আনন্দ হিসেবে ব্যবহার করেছে, সেটি দর্শকদের মধ্যে চরম অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে অক্ষয় কুমার ও শ্রেয়াস তালপাড়ের চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি বারবার সৌন্দর্যার শরীরের বিভিন্ন অংশের দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে, যা দর্শকরা অশালীন ও অসম্মানজনক বলেই মনে করছেন।
শুধু সৌন্দর্য্য নন, ছবির অন্য নারী চরিত্ররাও একই রকমভাবে অবমূল্যায়িত। জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ, নারগিস ফাখরি এবং সোনম বাজওয়ার মতো তারকারাও এখানে কেবল প্রপসের মতো উপস্থিত ছিলেন। তবে সৌন্দর্য্য যেহেতু নতুন, তাই তিনিই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। চরিত্রের গভীরতা না থাকায় এবং কেবল ‘চকচকে রূপ’-এর ভরসায় তাঁকে তুলে ধরা হওয়ায়, তাঁকে নিয়ে ট্রোলও হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
এই ধরনের প্রবণতা যে শুধু পুরনো নয়, বরং নতুন অভিনেত্রীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। কমেডির নামে একের পর এক অশালীন রসিকতা, শরীর নিয়ে হাস্যকর উপস্থাপন, এমনকি যৌনতা সম্পর্কিত ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে হাউসফুল ৫ যেন গ্র্যান্ড মস্তির অনুকরণ। অথচ এই ছবিকে শুরুতে প্রচার করা হয়েছিল একটি পরিষ্কার, পারিবারিক বিনোদনের ছবি হিসেবে।
প্রশ্ন উঠেছে, বলিউড কি এখনো শিখতে পারেনি কীভাবে নারীদের সম্মান জানিয়ে একটি মজার গল্প বলা যায়? সৌন্দর্য্যর মতো একজন নতুন শিল্পী, যিনি স্বপ্ন নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছেন, তাঁকে যদি শুরুতেই এমন একপাক্ষিকভাবে তুলে ধরা হয়, তবে ভবিষ্যতের অনেক প্রতিভাই হয়তো হারিয়ে যাবে।
হাউসফুল ৫ এখন কেবল একটি ব্যর্থ কমেডি নয়, এটি হয়ে উঠেছে বলিউডের সেই দিকটি উন্মোচনের প্রতীক—যেখানে নারীকে এখনো সম্মান নয়, ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখা হয়। এখন সময় এসেছে সেই ধারা বদলানোর। দর্শকরা আর হাসছেন না, বরং প্রশ্ন তুলছেন, প্রতিবাদ করছেন। এখন প্রয়োজন শক্তিশালী নারী চরিত্র, সৎ গল্প এবং দায়িত্বশীল নির্মাণ। কারণ, মজার নামে আর অশালীনতা নয়।
এফপি/টিএ