বর্তমান রাজনীতিতে প্রায় নিরঙ্কুশ প্রাধান্য সৃষ্টিকারী দল বিএনপি : জাহেদ উর রহমান

নির্বাচন যতটা সম্ভব এগিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের জন্য ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাই নির্বাচনকে এগিয়ে আনার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে।

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অবর্তমানে দেশের বর্তমান রাজনীতিতে প্রায় নিরঙ্কুশ প্রাধান্য সৃষ্টিকারী দল বিএনপি।

তারা ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথম ভাগে হবে জাতীয় নির্বাচনের তারিখকে স্বাগত তো জানায়ইনি; বরং বেশ কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা প্রকাশ্যভাবে অন্তত ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে অটল। এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা তাই দেশের রাজনৈতিক সংকট দূর করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা নিজেই নির্বাচনের জন্য এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন।

কথাটি তিনি দেশ-বিদেশে অনেকবার বলেছেন। জাপান সফরে নির্বাচন কখন হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সংস্কার কতটা সম্পন্ন করা হচ্ছে, তার ওপর উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘...আমরা যদি খুব তড়িঘড়ি করি, কিছু সংস্কার করি এবং অন্যান্য সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা এটা (নির্বাচন) ডিসেম্বরে করতে পারি। তবে আমাদের যদি ভালো সংস্কার দরকার হয়, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।’ কিন্তু কিছু ব্যক্তি সংস্কার রেখে নির্বাচন শেষ করতে বলছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল এটা বলছে।’’

প্রশ্ন রেখে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল কি শুধু ‘একটি দল’? এবং সেই দলটি কি ‘সংস্কার রেখে’ নির্বাচন চায়? দুটি মন্তব্যের কোনোটিতেই সত্যতা নেই; কারণ, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত/অনিবন্ধিত প্রায় সব দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় কিংবা ডিসেম্বরে আপত্তি নেই। আর প্রধান উপদেষ্টার ইঙ্গিত করা দলটি কয়েকটি মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু দ্বিমত ছাড়া আর প্রায় সব সংস্কার মেনে নিয়েছে। বরং একটি দল, এনসিপির নানা সময়ের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না।’’

‘বেশি সংস্কারের জন্য নির্বাচন দিতে ছয় মাস বেশি সময় লাগবে, এই যুক্তি যখন দেওয়া হচ্ছিল, তখন দীর্ঘকাল এই প্রশ্নও ছিল, অনেক বেশি সংস্কার করলেও বাড়তি ছয় মাস সময় কেন লাগবে? প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর এই সময়টা এখন ডিসেম্বরের শেষ সীমার চেয়ে ছয় মাস নয়, সাড়ে তিন মাস বেশি। এই বেশি সময়টা কেন প্রয়োজন, এই ব্যাখ্যা আমরা পাইনি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে।

‘যেহেতু এই সরকারের সময় কোনো সংবিধানিক পরিবর্তন সম্ভব নয়, তাই সেই সংস্কারগুলো করা সম্ভব, যেগুলো আইন, বিধিবিধান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। এই সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে সব সংস্কারেও যদি সবাই একমত হয়, তাহলে সেগুলো এই ডিসেম্বরের বেশ আগেই করে ফেলা সম্ভব ছিল। পাশাপাশি চলতেই পারত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো। কিন্তু আমরা দেখেছি, যেসব সংস্কারের ক্ষেত্রে সব দলের ঐকমত্য হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই, সেগুলোও ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করার জন্য কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।’

‘‘শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সময় যেখানে নির্ধারিত হলো, তাতে কেউ কেউ একধরনের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ খুঁজে পেতেও পারে—এই সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে মূলত এনসিপি এবং প্রধান উপদেষ্টার যৌথ আগ্রহে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনার ভিত্তিতে এনসিপির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষপাতকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে এই আলোচনাও আছে, স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাস এবং এই মাস জামায়াতে ইসলামীর জন্য খুবই বিব্রতকর বলে ডিসেম্বরে নির্বাচন না করার জন্য জামায়াতেরও তীব্র চাপ আছে।’’

‘প্রধান উপদেষ্টা যখন নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন, তখন আমাদের তো দেখার কথা ছিল সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের সংস্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আমরা কি দেখছি সেটা? পুলিশ সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে পুলিশকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারা পুলিশ বাহিনীতে পরিণত করতে পারবে কি না, সেই বিতর্ক ভালোভাবেই আছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট বাস্তবায়নের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। এখানে আমরা স্মরণ রাখব এই কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কোনো রকম আলোচনা হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ সংস্কারের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই কার্যকর করবে সরকার। অর্থাৎ এই সংস্কারগুলো এর মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারত।’

‘স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার যদি সংশয় থাকে, নির্বাচনের সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটার পরিস্থিতি হলে সেটা ঠেকানোর সাধ্য পুলিশ-প্রশাসনের আছে কি না, তাহলে প্রশ্ন আসবেই এই সমস্যা সমাধানে গত ১০ মাসে সরকার কী কী করেছে? সব কাজের আগেই কি জরুরি ছিল না প্রশাসন-পুলিশকে কার্যকর করে তোলার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা? কারণ, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য মতেই ডিসেম্বরেও নির্বাচনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কার্যত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য, দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের পর আরও তিন মাস বেশি সময় নিয়ে কী অর্জন করতে পারবে সরকার, যা এর আগের ১৬ মাসে পারা যায়নি? আর শেষ তিন মাসে অনেক কিছু পারা গেলে এই প্রশ্ন তো তোলা যায় যে আগের ১৬ মাসে এসব করতে কি সরকার আন্তরিক ছিল না?’

‘সার্বিক প্রেক্ষাপটে বলাই যায়, এই বছরের ডিসেম্বর কিংবা তার খুব কাছাকাছি সময়ে নির্বাচনের জন্য সরকারের কোনো ইচ্ছাই ছিল না। ফলে এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তা দূর করতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে ওই সময়ে নির্বাচন না হওয়ার পেছনে নানা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিকে আমলে নিয়ে নির্বাচনকে যতটা সম্ভব এগিয়ে আনার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে।’

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক শুরু Jun 13, 2025
img
যতদিন দরকার, ততদিন আক্রমণ অব্যাহত রাখা হবে: নেতানিয়াহু Jun 13, 2025
img
টিউলিপ ব্রিটেনের রাজনীতিতে কতটা প্রভাবশালী, টের পেলেন ড. ইউনূস : গোলাম মাওলা রনি Jun 13, 2025
শাহরুখপুত্র আরিয়ানকে নিয়ে সাজালের স্টোরি! Jun 13, 2025
"তীব্র রোদে ঠান্ডা ভালোবাসা-ঢাকায় নবী মিয়ার রোজগারের গল্প" Jun 13, 2025
লন্ডন সফরে টিউলিপের অনুরোধে সাড়া দিলেন না ড. ইউনূস Jun 13, 2025
img
ত্রিবিক্রমের নতুন কাহিনিতে দেবতার রূপে এবার এনটিআর Jun 13, 2025
img
হোটেল ডরচেস্টারে পৌঁছেছেন তারেক রহমান, কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু বৈঠক Jun 13, 2025
ইউনূসের সাথে সাক্ষাতে উচ্ছ্বসিত ক্যাথরিন ওয়েস্ট Jun 13, 2025
img
প্যারিসে স্বপ্নের মতো সময় কাটাচ্ছেন মেহজাবীন ও রাজীব Jun 13, 2025
img
‘থাগ লাইফ’-এ তৃষার চরিত্র ঘিরে অভিযোগ তুলেছে দর্শকরা Jun 13, 2025
img
ফরিদপুরে গ্রেফতার আ.লীগ ও কৃষক লীগের দুই নেতা Jun 13, 2025
img
আল্লু অর্জুনকে নিয়ে এটলির নতুন ছবি, নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই থাকছেন তিনি Jun 13, 2025
img
মুম্বাই টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালেও হারলেন শ্রেয়াস আইয়ার Jun 13, 2025
img
বাংলাদেশ সফরে আসছেন না বাবর-রিজওয়ান-শাহীন! Jun 13, 2025
img
এবার থাইল্যান্ডে জরুরি অবতরণ করল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট Jun 13, 2025
img
সন্তান জন্মের পর থেকে ‘ভালো’ বাবা ও স্বামী হয়ে ওঠেন বুমরাহ Jun 13, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন তারেক রহমান Jun 13, 2025
img
গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে : জ্বালানি উপদেষ্টা Jun 13, 2025
img
"এই ফ্লাইট কি নিরাপদ?"—ভিডিওর ঘণ্টা পেরোতেই দুর্ঘটনায় বোয়িং ৭৮৭ Jun 13, 2025