‘থাগ লাইফ’-এ তৃষার চরিত্র ঘিরে অভিযোগ তুলেছে দর্শকরা

কামাল হাসান ও মণি রত্নমের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘থাগ লাইফ’কে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। ভেবেছিল সবাই—তামিল সিনেমায় নতুন সংজ্ঞা আনবে এই প্রজেক্ট। কিন্তু ছবি মুক্তির পর সেই আলোচনা এখন রাজনীতি বা গল্পের জটিলতা নিয়ে নয়, বরং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণনের চরিত্র।

ছবির মুক্তির আগে তৃষার চরিত্রকে ঘিরে বলা হয়েছিল—এই একটি নারীচরিত্রই হতে চলেছে সাহসী, বহুস্তর বিশিষ্ট, এবং স্বাধীন সত্তার প্রতীক। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, তার উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। গল্পে তার প্রভাব বলতে গেলে নেই বললেই চলে। চরিত্রটি যেন কাটছাঁটের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া এক অনিশ্চিত ছায়া মাত্র।

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে একের পর এক সমালোচনা। কেউ প্রশ্ন তুলছেন—‘তৃষা কেন এমন রোল করলেন?’ কেউ আবার একে বলছেন ‘অপ্রাসঙ্গিক যৌনায়ন’। সমালোচকদের মতে, এই চরিত্রে কোনো শক্তিশালী আর্ক ছিল না, ছিল না স্বকীয়তা বা প্রাসঙ্গিকতার ছোঁয়াও।

তবে এই বিতর্ক শুধু তৃষাকে নিয়ে নয়, বরং বড় প্রশ্নটা এখন দাঁড়িয়েছে—আমরা কি নারীচরিত্রের ‘সাহস’ বলতে আদৌ কী বুঝি? সাহসী মানে কি কেবল শরীরী উপস্থাপন? নাকি একটি নারীচরিত্রের আত্মিক জটিলতা, নৈতিক দ্বন্দ্ব, এবং বাস্তবতার মধ্যে সাহস খোঁজা উচিত?

‘ভেদম’ সিনেমায় অনুষ্কা কিংবা ‘ধুলপেট’–এ স্নেহার চরিত্রগুলো ছিল তীব্র, আবেগঘন, এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ জানানো। তারা মনে দাগ কেটেছে, কারণ তাদের জন্য লেখা ছিল দৃঢ় ও সুস্পষ্ট। সেই তুলনায় তৃষার চরিত্রটি যেন একটি অসমাপ্ত খসড়া।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—একজন অভিনেত্রী যখন ঝুঁকি নিয়ে সাহসী চরিত্রে কাজ করেন, তখন ব্যর্থ হলে তাকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়। অথচ ব্যর্থতার দায় তো মূলত পরিচালনার, চিত্রনাট্যের, কিংবা দর্শকের প্রস্তুতির।

এই ট্রেন্ড যদি চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা হয়তো শুধু নিরাপদ, চেনা, সুবিধাজনক নারীচরিত্রই দেখতে পাব। সাহসী, ভাঙচুর করা চরিত্ররা হারিয়ে যাবে।

‘থাগ লাইফ’ হয়তো বক্স অফিসে ব্যর্থ, কিন্তু তৃষা-ঘিরে এই বিতর্ক যেন আমাদের সংস্কৃতিতে এক বড় প্রশ্ন তুলে দেয়—আমরা কি প্রস্তুত, সেই নারীদের গ্রহণ করার জন্য, যারা একরৈখিক নন? না কি শুধু তখনই স্বীকৃতি দিই, যখন তারা আমাদের সামাজিক স্বস্তির বৃত্তে থাকেন?

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দিনের শুরুতেই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী, ঢাকায় গরমে অস্বস্তি Jun 14, 2025
img
ইউনূস-গর্ডন ব্রাউনের ফোনালাপে অর্থনীতি ও রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা Jun 14, 2025
img
রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক সংযোগ নেই Jun 14, 2025
img
সিরাজগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গ্রেফতার ১৭ Jun 14, 2025
img
ইউনূস-তারেক বৈঠকে ষড়যন্ত্রকারীদের ‘গেম ওভার’,বললেন প্রেস সচিব Jun 14, 2025
img
তেহরানের মিসাইল হামলায় এক ইসরায়েলি নিহত Jun 14, 2025
img
দিনাজপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ৫ জনের Jun 14, 2025
img
ইরানের হামলায় ইসরায়েলে আহত অন্তত ৪১ জন Jun 14, 2025
img
পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলে নেই, নিজেকে প্রমাণ করতে বিগব্যাশে বাবর আজম Jun 14, 2025
img
নির্বাচন যেভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, সংস্কার সেভাবে প্রাধান্য পায়নি: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Jun 14, 2025
img
বগুড়ায় বন্ধুর ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল বন্ধু্র Jun 14, 2025
img
তেহরানের মিসাইল সরাসরি আঘাত হানল ইসরায়েলের একাধিক ভবনে Jun 14, 2025
img
রাজধানী তেহরানে ফের একাধিক বিস্ফোরণ Jun 14, 2025
img
এশিয়া কাপের আগে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করতে চায় পাকিস্তান Jun 14, 2025
img
রাজবাড়ীতে এক পাঙাশ মাছের দাম সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা Jun 14, 2025
img
ফের মিসাইল হামলা ইরানের, আঘাত হানল ইসরায়েলে Jun 14, 2025
img
ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত, ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী : লিন জিয়ান Jun 14, 2025
img
একক হিসেবে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ এনসিএ’র সবচেয়ে বড় ঘটনা: প্রেস সচিব Jun 14, 2025
img
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ও সুপ্রিম নেতা খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল Jun 14, 2025
img
মার্করামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, ইতিহাস গড়তে প্রোটিয়াদের দরকার আর ৬৯ রান Jun 14, 2025