‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার আর কোন সুযোগ নেই’

সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন টক শো-তে বিশ্লেষক ও সাংবাদিক শাহেদ আলম আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদ, জাতিসংঘের অবস্থান এবং নিষিদ্ধ রাজনীতির প্রসঙ্গে এক দীর্ঘ, কঠোর ও খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন।

টক শো-তে তিনি বলেন, আপনাকে তো একটা জায়গায় এসে দোষ স্বীকার করতেই হবে। আপনাকে বুঝতে হবে, যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেটা বাস্তব। আমি জোর করেও যদি কিছু বলি, অভিযোগ তুলি, জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট তো আর জোর করে বলেনি—তারা ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট দিয়েছে।

তিনি আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে বলেন, আমি দেখি না, আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা এখন নেতৃত্বে আসতে চান, তারা এসব বাস্তবতাকে সামনে আনছেন। আপনি যদি শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও তার আশপাশের মানুষদের রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন—তারা হত্যার বদলে হত্যা চায়। শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, ২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছেন। এটা কোনো শুভ রাজনীতি নয়।

শাহেদ আলম বলেন, আমরা যদি সত্যি বলি—যা ঘটেছে, তা আমাদের কল্পনার বাইরে। আমরা চাইনি এমনটা হোক। আমাদের বলা দরকার ছিল—‘আমরা দুঃখিত, আমরা ব্যর্থ হয়েছি বুঝতে, আমরা নতুনভাবে শুরু করতে চাই’। কিন্তু এমন মনোভাব আমরা দেখতে পাইনি।

তিনি বলেন, আমি তো মাঝামাঝি অবস্থানে থেকেই কথা বলেছি। কিন্তু যদি জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যেত? আমার বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, ডিজিএফআই অন্তত তিনবার তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল। আমি রাজনীতি করি না, কিন্তু আমার পরিবারকে ভয়াবহ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পর যদি আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যেতেন এবং তাঁর ঘোষণামতো কাউকেই আর ছাড় না দেওয়া হতো—তাহলে আমার পরিবারও হয়তো জেলে যেত।

সাংবাদিকদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে শাহেদ আলম বলেন, আমার মতো আরও অনেকের পরিবার হয়তো এখন আবার জেলে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের কেউ কেউ আবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এটা খুবই রূঢ় বাস্তবতা, এবং এর কোনো সমর্থন করার উপায় নেই। আমি সম্ভবত একমাত্র সাংবাদিক, যিনি বারবার বলে গেছি—শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছেন, মাফিয়াতন্ত্র চালু করেছেন, সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু আমরা যদি ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করি, তাহলে তো আমরা ‘বেটার শাসন’ দিলাম কোথায়?

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের মাত্র এক ঘণ্টা পরেই আমি বলেছি—আমরা নতুন ফ্যাসিস্ট হতে দিতে পারি না। আমি দুই ঘণ্টার মধ্যে লিখে ফেলি—বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদ নয়, আমাদের সবাইকে নিয়ে পথ চলতে হবে। এগুলো রেকর্ডেড।

তিনি বলেন, হ্যাঁ, কেউ না কেউ এখন নির্যাতনের মধ্যে যাচ্ছে। রাজনীতি খুবই নির্মম। তাহলে এত রক্ত, এত ত্যাগের পর আমরা যে পরিবর্তন চেয়েছি, সেটা কোথায়? আগে শাহেদ আলম ভুক্তভোগী ছিল, এখন যদি আরেকজন হয়, এক্স-ওয়াই নামে পরিচিত হয়, তফাৎটা কী? পরিবর্তন তো মানুষের মধ্যেই ঘটতে হবে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ কখনো নিষিদ্ধের পক্ষে না। তারা আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে বলছে—রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা কোনো ভালো দৃষ্টান্ত নয়। বরং যতটা সম্ভব এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা উচিত। সরকার সেই সুযোগটাই নিয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এতটা ভয় পাই না আওয়ামী লীগকে, যে তাদের নিষিদ্ধ করতেই হবে।

শাহেদ আলম বলেন, আজ শেখ হাসিনার পক্ষে দিনের আলোতে মিছিল করার মতো ১০ জন লোক নেই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো, কিন্তু রাস্তায় কিছুই দেখা গেল না। শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরও রাস্তায় প্রতিবাদ হয়নি, একমাত্র বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছাড়া।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে যে ‘বৃহৎ শক্তির জুজু’ তৈরি করা হয়েছিল, তার বাস্তব ভিত্তি কোথায়? মাঠ পর্যায়ে অনেকেই আমাকে বলেন—আপনি ঠিক বলছেন না, আওয়ামী লীগ এখনো শক্তিশালী। কিন্তু আমি বলি—এই রাজনৈতিক শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে, আমরা তো নিজেরাই ব্যর্থ।

তিনি বলেন, আমি নিষিদ্ধের রাজনীতির পক্ষে না। যেদিন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হলো, ঠিক তার পরদিনই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বলেছি—আমি নিষিদ্ধের রাজনীতির ভক্ত না। যারা রক্তের দাগমাখা অপরাধ করেছে, অস্ত্র, হেলমেট নিয়ে সন্ত্রাস করেছে—তাদের আইনের আওতায় এনে সাজা দিন। কিন্তু কাউকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা সঠিক পথ নয়। জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হলেও আমি এর পক্ষে ছিলাম না, আজও না।

এসএম  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাফল্যের খোঁজে নয়, নিজেকে খুঁজে চলেছেন অভিনেত্রী পূজা হেগড়ে Jun 16, 2025
img
নাটোরে জমি থেকে লুট হওয়া ৬০ মণ ভুট্টা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী Jun 16, 2025
img
শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ ড্র করতে পারাটাও হবে বড় অর্জন : হান্নান Jun 16, 2025
img
সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এখন গণমানুষের দাবি : রেজাউল করীম Jun 16, 2025
img
আগামী ২৮ জুন জাতীয় পার্টির সম্মেলন স্থগিত Jun 16, 2025
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ Jun 16, 2025
img
গল টেস্টে নতুন পজিশনে দেখা যাবে অলরাউন্ডার শান্তকে! Jun 16, 2025
img
অভিনেত্রী ত্রিশার তেলুগু ছবিতে প্রত্যাবর্তন? ‘বিশ্বম্ভরা’ হতে পারে তার বড় কামব্যাক! Jun 16, 2025
img
মুকুল দেবের মৃত্যুর পেছনের কারণ জানালেন রাহুল দেব Jun 16, 2025
img
তেহরানের বাসিন্দাদের ক্ষতি করার কোনও ইচ্ছা নেই, বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ Jun 16, 2025
img
দেশে একদিনে আরো ২৩৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত Jun 16, 2025
৫০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র! নেতানিয়াহুর দোতলা বাড়ি এখন ধ্বং'স'স্তূ'প Jun 16, 2025
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সুখবর! বিমান ভাড়ায় পাবেন বিশেষ ছাড় Jun 16, 2025
img
ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিল পাকিস্তান Jun 16, 2025
img
বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে ফিরল হাজিদের বহনকারী ফ্লাইট Jun 16, 2025
img
ভারতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ Jun 16, 2025
“বিরোধীপক্ষ নয়, রাষ্ট্রপতি করুন ইউনূসকে”—সাংবাদিক ইলিয়াস Jun 16, 2025
নেত্রীকে কুপ্রস্তাব এনসিপি নেতা তুষারের! অডিও ফাঁস করলেন জাওয়াদ নির্ঝর Jun 16, 2025
img
রোহিতের উত্তরসূরি ঠিক হয়ে গেছে? শুভমান নন, হিটম্যানের আসনে বসছেন কে? Jun 16, 2025
img
সংকট কাটিয়ে রেকর্ডের পথে চট্টগ্রাম বন্দর Jun 16, 2025