ইরানকে লক্ষ্য করে সামরিক হামলার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপে একটি বিল উত্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন একক সিদ্ধান্তে ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করতে না পারেন, সে উদ্দেশ্যে সোমবার (১৫ জুন) এ বিলটি উত্থাপন করেন ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন।
বিল উত্থাপনের সময় তিনি বলেন, “ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই আরেকটি অনন্ত যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি ঠেকাতে আমাদের স্পষ্ট আইন দরকার।”
গত শুক্রবার ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থি বিভিন্ন গ্রুপ জোরালোভাবে চাইছে, মার্কিন বাহিনী যেন সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে ইরানবিরোধী হামলায় অংশ নেয়।
তবে টিম কেইনের মতে, “আমেরিকান জনগণের কোনো আগ্রহ নেই মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি ‘ফরএভার ওয়ার’-এ নিজেদের সন্তানদের পাঠাতে। এই প্রস্তাব নিশ্চিত করবে যে, আমাদের সেনাবাহিনীকে যদি কোনো সংঘাতে জড়ানো হয়, তা হবে কংগ্রেসে বিতর্ক ও ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত।”
যুদ্ধক্ষমতা সীমিত করার প্রচেষ্টা
এই বিলের ভিত্তি ১৯৭৩ সালের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন’, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্টদের একতরফা যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা সীমিত করতে করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে থাকলেও, বিগত কয়েক দশকে একের পর এক প্রেসিডেন্ট তাদের কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই হামলা চালিয়েছেন।
সিনেটর কেইনের প্রস্তাব এই রীতির বিরোধিতা করে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে কংগ্রেসের কাছ থেকে অনুমতি নিতে বাধ্য করতে চায়।
দ্বিদলীয় সমর্থন ও বিরোধিতা
এই প্রস্তাবটি কেবল ডেমোক্র্যাট শিবিরেই নয়, বরং রিপাবলিকানদের ভেতরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক রক্ষণশীল আইনপ্রণেতা মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি হবে।
‘ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশন’-এর মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিচালক হাসান এল-তাইয়্যাব বলেন, “এই বিলটি ট্রাম্প প্রশাসনকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—ইসরায়েলকে বিনা শর্তে সমর্থন দেয়া হবে না, এবং আমেরিকা নিজের স্বার্থ নষ্ট হয় এমন যুদ্ধে জড়াবে না।”
তিনি আরও বলেন, “এটি কংগ্রেসের ভেতর ইরানবিরোধী যুদ্ধে সম্ভাব্য বিরোধিতা কতটা গভীর, তা মাপার জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের একাংশ এই যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপকারী বলে মনে করছেন।”
এফপি/টিএ