হলি আর্টিজান হামলা: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২২৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর (২০২৪) আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসা‌মিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।
রায়ে আদালত বলেন, আসামিরা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাগারেই থাকবেন।

রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিমুল এহসান জুবায়ের বলেন, আদালত রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে দিয়েছেন। আর আসামিদের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।

সাজা কমানোর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারিক আদালত যে ধারায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন, সেই ধারায় আসামিদের অপরাধ হয়নি। সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এর ধারা ৬ এর (অ্যা) তে অপরাধ করেছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজাই যাবজ্জীবন। কিন্তু বিচারিক আদালত ভুল করে (আ) উপ-ধারায় সাজা দিয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগ আজ রায়ে বলেছেন, বিচারিক আদালত ভুল ধারায় সাজা দিয়েছিলেন। এ কারণে উচ্চ আদালত সেই রায়ে হস্তক্ষেপ করে আমৃত্যু সাজা দিয়েছেন।

২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর আলোচিত এ মামলায় সাতজনের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষ হয়।

হামলার ঘটনা ও মামলার বিবরণ-
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।

এ ঘটনার মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান একজনকে খালাস দিয়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন, তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। সে অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

দে‌শের ই‌তিহা‌সে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।

হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আজ রাত থেকে মাঠে গড়াবে প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা ও লিগ ওয়ানের নতুন মৌসুম Aug 15, 2025
img
প্রস্তুতির পালা শেষ, অ্যাশেজে আক্ষেপ ঘোচাতে চান জো রুট Aug 15, 2025
img
কাশ্মীরে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ Aug 15, 2025
পিতা মাতার জন্য যেভাবে দোয়া করবেন | ইসলামিক টিপ Aug 15, 2025
img
প্রেস সচিব আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি: ওসি ক্যশৈন্যু মারমা Aug 15, 2025
img
ডিএসইর বাজার মূলধন হারাল ৩৩৯৬ কোটি টাকা Aug 15, 2025
img
ক্যামেরার সামনে রোহিতের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছি: ইরফান পাঠান Aug 15, 2025
img
আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আজ Aug 15, 2025
img
উপদেষ্টা আসিফ অন্যদের নিজের চরিত্র হননের সুযোগ দিয়েছেন : আব্দুন নূর তুষার Aug 15, 2025
img
শোকস্তব্ধ রুক্মিণী, ফিরলেন কলকাতায় Aug 15, 2025
img
‘ডিপ্রেশনে না গিয়ে ট্যুরে যান’ Aug 15, 2025
img
আজ দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে? Aug 15, 2025
img
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষক-কর্মচারীদের যাতায়াতে কড়াকড়ি Aug 15, 2025
img
বাজারে ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি Aug 15, 2025
img
অরিজিৎ সিং-এর দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ, বিপাকে গায়ক Aug 15, 2025
বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে চায় ভারত – যুক্তরাষ্ট্র, চলছে নতুন পরিকল্পনা Aug 15, 2025
img
ভারত কোনোভাবেই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না: নরেন্দ্র মোদী Aug 15, 2025
img
আর্থিক জটিলতায় আটকে সাইমন টোফেলের বিসিবি চুক্তি Aug 15, 2025
img
রাজশাহীতে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার Aug 15, 2025
img
মায়ের জন্মদিনে নিয়ম ভাঙলেন না জাহ্নবী কাপুর Aug 15, 2025