বিশ্বসেরা আকাশ প্রতিরক্ষাও ভেঙে ফেলেছে ইরান

বিশ্বে সবচেয়ে সুরক্ষিত আকাশসীমার দাবিদার ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এবার বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে ইরান। হাইপারসনিক প্রযুক্তি, ডেকয় কৌশল ও ব্যারেজ আক্রমণের মাধ্যমে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরাইলের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ঢাল ভেদ করেছে তেহরান।

বিশ্বখ্যাত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ‘আয়রন ডোম’, ‘অ্যারো-২’, ‘অ্যারো-৩’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ সহ আরও কয়েকটি আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ইরানের পালটা আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইসরাইলের আত্মবিশ্বাস।

আলজাজিরা ও সিএনএন-এর বরাত দিয়ে জানা যায়, শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের ভিত্তিতে দেশটিতে নির্বিচারে হামলা চালায় ইসরাইল। জবাবে, শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ছুড়ে ইরান শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানে নিহত হয়েছেন প্রায় ২৪০ জন এবং ইসরাইলে প্রাণ গেছে অন্তত ২৪ জনের। এরই মধ্যে ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরাইলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি পরিকল্পনা ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে।

এমনকি ইরান দাবি করছে, তারা ইসরাইলের অপ্রতিরোধ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইরান প্রতি মাসে ৩০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। এই হারে চললে আগামী ৬ বছরে তাদের হাতে থাকবে ২০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র!” যদিও তার এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেননি তিনি, তবে এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইরানকে একটি সামরিক আগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের কূটনৈতিক কৌশল হতে পারে।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর রকেট হামলার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ইসরাইলের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’।

২০১১ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হয় এবং ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী এটি ৯০ শতাংশ সফলতা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ভেদে সক্ষম। তবে ইরানের সর্বশেষ হামলা প্রমাণ করছে, হাইপারসনিক গতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র, ফেক ড্রোন ও ব্যারেজ হামলার সমন্বয়ে আয়রন ডোমও অরক্ষিত।

২০২৩ সালে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছিলেন, ইরানের হাতে রয়েছে ৩ হাজারের বেশি বিভিন্ন শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র। এটি যে এখন বাস্তবে কত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তা প্রমাণ করছে চলমান সংঘাত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যকার নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানের ক্রমবর্ধমান অস্ত্র মজুত এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ হয়ে যাওয়া বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আরএম 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জোড়া উইকেটের ধাক্কা সামলে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা Jun 20, 2025
img
একযোগে ৬০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে ইসরায়েলের রাতভর তাণ্ডব Jun 20, 2025
img
স্বর্ণ আনার নিয়মে কড়াকড়ি, দেশের স্বর্ণের বাজারে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা Jun 20, 2025
img
যুদ্ধজাহাজ ও বিমান সরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নিয়ে সতর্কতা Jun 20, 2025
img
খামেনির ভাষণকে জীবনে শোনা শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আখ্যা দিলেন রনি Jun 20, 2025
img
বৃষ্টি হলেও বাড়তে পারে তাপমাত্রা Jun 20, 2025
img
আমাকে কেউ খুব একটা পছন্দ করে না, ঠেকায় পড়ে নেয়: বাঁধন Jun 20, 2025
img
চার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার দেবে এডিবি, চুক্তি সই Jun 20, 2025
img
মাইক্রোসফট অফিসের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা,ইসরাইলে ট্রেন স্টেশন বন্ধ Jun 20, 2025
img
কিট সংকটে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না খুলনা মেডিকেলে Jun 20, 2025
img
ইসরায়েলে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান : আইডিএফ Jun 20, 2025
img
‘দ্য ট্রেইটরস’ শো থেকে বাদ পড়লেন আরও চার প্রতিযোগী Jun 20, 2025
img
ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দেয়ার আহ্বান জানালেন পাক সেনাপ্রধান Jun 20, 2025
img
আজ ঢাকার বাতাস সহনীয়, দূষণের শীর্ষে মানামা Jun 20, 2025
img
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিয়ারশেবায় বড় বিস্ফোরণ Jun 20, 2025
img
'রোহিঙ্গা সংকট এখন অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে' Jun 20, 2025
img
শমী কায়সারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক, শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ Jun 20, 2025
img
সান্তোস ছাড়তে পারেন নেইমার! চুক্তি নবায়নে অনিশ্চয়তা Jun 20, 2025
img
ইরানের পক্ষে কিম-এরদোয়ান, পিছু হটলেন ট্রাম্প! Jun 20, 2025
img
হজে প্রাণ হারালেন ৩৬ জন বাংলাদেশি, চিকিৎসাধীন ২৫ Jun 20, 2025