ইরানের শক্তি দেখে সুর পাল্টালেন ট্রাম্প, দোষ চাপালেন নিজের গোয়েন্দা প্রধানের ঘাড়ে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ্যে নিজের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছেন। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড কংগ্রেসে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরান বর্তমানে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী এই কর্মসূচি আবার শুরু করার অনুমোদন দেননি।

তবে ট্রাম্প সরাসরি এই বক্তব্যকে ভুল বলে মন্তব্য করেছেন। তার দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে। গত ১৭ জুন সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ বাস্তবতা ভিন্ন।

২০ জুন আরেক দফা সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প আবারও গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে ভুল বলেন। যখন এক সাংবাদিক তাকে জানান যে এই মন্তব্য জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড করেছেন, তখন ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, “তাহলে সে ভুল বলেছে।”

পরবর্তীতে তুলসী গ্যাবার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য আছে যা বলছে, ইরান এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে। তিনি যোগ করেন, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন— এটা হতে দেওয়া যাবে না। যদিও এ বক্তব্য পূর্বের বিশ্লেষণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছিল ইরান এখনো কোনো অস্ত্র তৈরি করছে না।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিসারা বলেন, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশ্য বিরোধিতা করা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে গোয়েন্দা তথ্য উপেক্ষা করে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করছেন।

ইরান-ইসরাইল চলমান সংঘাত নিয়েও ট্রাম্পের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। গেল শুক্রবার তিনি বলেন, ইসরাইল যুদ্ধক্ষেত্রে ভালো করছে, তাই তাদের যুদ্ধ বন্ধে অনুরোধ করা কঠিন। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও খাটো করে দেখেন।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আলজাজিরার হেইডিজ হোক ক্যাস্ত্রো জানিয়েছেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি ইসরাইলকে বিমান হামলা থামাতে বলবেন না। এতে বোঝা যায়, কূটনৈতিক সমাধানের বদলে ট্রাম্প সরাসরি ইসরাইলের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন।

১৯ জুন ট্রাম্প জানান, এই সংঘাতের প্রতি মার্কিন প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নির্ধারণে তিনি আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই নির্ভর করছে এই আঞ্চলিক উত্তেজনা বড় যুদ্ধের দিকে যাবে নাকি থেমে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র— বিশেষ করে ফোর্ডোর গোপন স্থাপনা ধ্বংসে ইসরাইলের ঘোষিত মিশনে মার্কিন সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশের ভূমিকা তেমন গুরুত্ব দেননি। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেভায় ইউরোপের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দেন, “ইউরোপ সাহায্য করতে পারবে না।” এই মন্তব্য স্পষ্ট করে দেয়, ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতা ট্রাম্পের কূটনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন আনলেও, তিনি নিজের গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজশাহীতে বিচারকের বাড়িতে ঢুকে ছেলেকে হত্যা, আহত স্ত্রী Nov 13, 2025
img
অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রী সোনাক্ষী! সালমানের ‘দাবাং ট্যুর’ থেকে বাদ পড়তেই জল্পনা তুঙ্গে Nov 13, 2025
img
পটিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার Nov 13, 2025
img
ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপ জয়ের Nov 13, 2025
img
জীবন ভুল আর শেখার পথেই এগিয়ে যায়: রণবীর কাপুর Nov 13, 2025
img
আইসিসি থেকে দুঃসংবাদ পেল পাকিস্তান দল Nov 13, 2025
img
ভুলবশত এক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছিল : বিএনপি Nov 13, 2025
img
তোমার শরীরই তোমার আসল মন্দির: অক্ষয় কুমার Nov 13, 2025
img
গাইবান্ধায় জন্মসনদ জালিয়াতি, চেয়ারম্যান বরখাস্ত Nov 13, 2025
img
বহিষ্কার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী Nov 13, 2025
img
আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আস্থাহীনতা : ইসি আনোয়ারুল Nov 13, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী-বিএনপি সংঘর্ষে নারীসহ আহত ১০ Nov 13, 2025
img
লক্ষ্ণৌ ছেড়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে যোগ দিলেন শার্দুল ঠাকুর Nov 13, 2025
img
শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে : মাদ্রাসার ডিজি Nov 13, 2025
img
গ্রেপ্তার হলেন ঢাবির ছাত্রলীগ নেতা ও মহিলা লীগ সভাপতি Nov 13, 2025
img
দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে: জাগপা Nov 13, 2025
img
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, নারীকে মারধর Nov 13, 2025
img
১৭ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করল বিএনপি Nov 13, 2025
img
নিজের ব্যর্থতায় অনুপ্রেরণা খুঁজে পান অমিতাভ Nov 13, 2025
img
তোমাকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারবো না : মিমি চক্রবর্তী Nov 13, 2025