এনবিআর সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি থাকবেই: সিপিডি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্কার না হওয়ার জন্যই প্রতিবছর এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। 

রোববার (২২ জুন) সকালে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিয়ে আয়োজিত ডায়ালগে এসব কথা জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কর‍তে পারে না.. কেনো সেটা পারেনা? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখনো হয়নি। সংস্কার ছাড়া এই ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে এ রকম ঘাটতি চলতেই থাকবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেটে ঘোষণার পর আমরা যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, যার কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। আমার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ আয় বেশি, পরোক্ষ আয় কম। কিন্তু আমাদের দেশে উলটো আমাদের পরোক্ষ কর যা মূলত সাধারণ জনগণের ওপর পরে সেটা বেশি। আমাদের রাজস্ব আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে পরোক্ষ কর। এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু বাজেটের দর্শন হচ্ছে পুনর্বণ্টন। যাদের আয় বেশি তাদের থেকে বেশি কর আদায় করা। যারা অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ওই করের টাকা ব্যয় করা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা। পুনর্বণ্টনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বাজেটে সে বড় ধরনের পরিবর্তন দিতে পারে নাই। অথচ জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল। এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।

মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি দিয়েছে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো নিম্নমুখী। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। উচ্চমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা- সব কিছু মিলিয়ে এই বাজেটটি প্রণীত হয়েছে। সেজন্য এই বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করাটা চ্যালেঞ্জের। তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতান পুন:রুদ্ধার করা। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী, এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকা ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। ২০২৫ এর রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস বলেছে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।

বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে এমন প্রশ্ন করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগ হয়ে আসছে। কারণ ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ আসছে না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত সামান্য কম দেখানো হয়েছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত দেখানো হয়েছে এখানে উন্নতি বা ২৪.৩ শতাংশ হবে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এসময় ব্যক্তিখাতের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ এতো বেড়ে যাবে সেটা বোধগম্য না।

ইউটি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা Jun 22, 2025
img
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে বাজেট পাস: অর্থ উপদেষ্টা Jun 22, 2025
img
নতুন সঙ্গীকে নিয়ে রোলস রয়েসে শাহরুখ! Jun 22, 2025
img
মার্কিন নাগরিকদের লেবানন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের Jun 22, 2025
হঠাৎ কেন আর ‘চড়া’ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না রাশমিকা? Jun 22, 2025
img
ছুটির আমেজে অনন্যা, মায়ামির রঙিন পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নির্মল আনন্দে Jun 22, 2025
img
সালমান খানের ঠাট্টা, 'সে পালিয়ে বিয়ে করেছিল, তার বউও পালিয়ে গেছে' Jun 22, 2025
img
'তোকে ছাড়া আমি আর কখনোই আগের মতো থাকতে পারব না' Jun 22, 2025
img
নিজের দেশকে পুড়তে দেখে ভেঙে পড়েছেন মন্দানা Jun 22, 2025
img
এই হামলা দীর্ঘমেয়াদি নয়, চাইলে এখনই শেষ করা হবে: যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা Jun 22, 2025
img
বড়দিনে ভূতের হোটেলে আমন্ত্রণ জানালেন মিমি Jun 22, 2025
৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ থাকবে এনসিপির ঘরে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Jun 22, 2025
১৬ জনের স্ক্রিনশট ‘ফাঁস’ করে যা বললেন নিলা ইসরাফিল Jun 22, 2025
শিক্ষামন্ত্রী হলে যা করবেন ছাত্রদলের সম্পাদক নাছির উদ্দিন Jun 22, 2025
img
আইপিএল জয় উদযাপনে বিসিসিআইয়ের নতুন নির্দেশনা Jun 22, 2025
img
স্বৈরাচারের দোসররা বাঁচার জন্য বিভিন্ন কর্ম কৌশল করতে পারে: ডা. জাহিদ Jun 22, 2025
img
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনায় উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতে চূড়ান্ত সতর্কতা Jun 22, 2025
img
একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানকে প্রকাশ্য ও গোপনে বার্তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী Jun 22, 2025
img
ইরান টিকে থাকবে, নেতানিয়াহু থাকবে না : রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট Jun 22, 2025
img
ইরানে আমেরিকার হামলা নিয়ে অবশেষে প্রতিক্রিয়া জানাল চীন Jun 22, 2025