ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধারের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইপ্সিতার পরিবার বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
ইপ্সিতার মরদেহ উদ্ধারের পর নৌপুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতের বাবা মাসুদ রানা লক্ষ্মীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মাসুদ রানা বলেন, ১৭ জুন সকালে প্রাইভেট পড়াতে বাড়ি থেকে বের হয় ইপ্সিতা। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবার। কোথায় তার খোঁজ না পেয়ে ভোলা সদর থানায় জিডি করা হয়।
পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন ঢাকা যাওয়ার পথে কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে একটি মেয়ে পানিতে পড়েছে। লঞ্চে গিয়ে তারা জানতে পারেন মেয়েটি ইপ্সিতা। অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের খবরে লক্ষ্মীপুরে গিয়ে পোশাক দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন তারা। পরিচয় শনাক্তে দেরি হওয়ায় এর আগেই পুলিশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহ দাফন করায়।
পরিকল্পিতভাবে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মাসুদ রানা বলেন, প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে ইপ্সিতা কিভাবে কার সঙ্গে লঞ্চে গেল? পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে লঞ্চে নিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পেয়েছে এবং পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার না হলে হত্যাকারীরা এভাবেই হত্যা করতে থাকবে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মেহেদী হাসান বাপ্পি নামে এক ব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ইপ্সিতার।
তবে বাপ্পি বিবাহিত জানার পর সেই সম্পর্কের অবনতি হয়। ইপ্সিতা যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে মেহেদী হাসান বাপ্পি নানাভাবে তার পারিবারিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। পরে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর চরফ্যাশন উপজেলার আঞ্জুরহাটের বাসিন্দা মো. নুর নবীর ছেলে মো. মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ায় মেয়েকে তারা তুলে দেননি। ৫-৬ মাস আগে কোনো কারণ ছাড়াই ইপ্সিতাকে ডিভোর্স দেয়ায় বাদী হয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ইপ্সিতা। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ইপ্সিতাসহ তার বাবার বিরুদ্ধে চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। পরে ইপ্সিতার বাবা বাদী হয়ে ভোলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো চলমান রয়েছে।
কর্ণফুলী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার (মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ১৭ জুন সকালে ঢাকাগামী একটি লঞ্চে এক তরুণী কেবিন নিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তাকে কেবিন দেওয়া হয়নি। এরপর তিনি লঞ্চের ডেকে চলে যান। লঞ্চটি ইলিশাঘাট থেকে রওনা হয়ে কালিগঞ্জ অতিক্রম করে মেঘনারচর এলাকায় পৌঁছালে ওই তরুণী হঠাৎ করে লঞ্চের তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। যাত্রীদের চিৎকারে লঞ্চের কর্মীরা প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার প্রচেষ্টা চালান, তবে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে লঞ্চটি পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, ইপ্সিতা নামের ওই তরুণী ১৭ জুন নিখোঁজ হন। তার বাবা ২০ জুন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বর্তমানে মামলাটি লক্ষ্মীপুর পুলিশ তদন্ত করছে।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) ঝলক মোহন্ত বলেন, মজু চৌধুরীঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন। পাশাপাশি ইপ্সিতার বাবা একটি পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন যার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।