করোনার উপসর্গ থাকলেও, পরীক্ষার জন্য নেই কিট

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নেই কিট। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা সত্ত্বেও কর্মরতদের মধ্যে বিতরণ হয়নি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, প্রস্তত করা হয়নি কোনো আইসোলেশন ওয়ার্ড।

সাড়ে চার বছরেও নির্মাণ হয়নি আইসিইউ ইউনিট। এতে হতাশ রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা শনাক্তকরণ কিট চেয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার প্রায় ১২ লাখ জনসংখ্যার চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসাস্থল জেলা সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২শ থেকে ১৩শ রোগী চিকিৎসাসেবা নেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জ্বর ও ঠান্ডা-কাঁশিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই এ হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকেই। কিন্তু পরীক্ষার কোনো কিট না থাকায় সবাইকেই পরীক্ষা না করিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। এমনকি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা সত্ত্বেও কর্মরতদের মধ্যে বিতরণ হয়নি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। প্রস্তত করা হয়নি কোনো আইসোলেশন ওয়ার্ড। শুধু সদর হাসপাতাল নয় রাজবাড়ীর প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোরই একই অবস্থা। সেখানে নেই কোনো প্রস্তুতি ও করোনা পরীক্ষার কিট।

করোনা পরীক্ষা করতে আসা রাজবাড়ী শহরের ধুঞ্চি গোদারবাজার এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, আমার চার দিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডা-কাশি। করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য সদর হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে করোনা শনাক্তের কোনো কিট নেই। তাই ডাক্তারের পরামর্শে রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করে ফিরে যাচ্ছি। সারাদেশে নতুন করে করেনার প্রকোপ বেড়েছে। কিন্তু এ নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে কোন প্রস্তুতিই দেখছি না। আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত করা হয়নি।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রহিমা ইয়াসমিন বিথী বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য আমরা স্বাস্থ্যসেবায় যারা নিয়োজিত আছি, আমাদের পার্সোনাল প্রোটেকশন নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। যেমন পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার এসবের কিছুই দেওয়া হয়নি। আমরা নিজের এবং রোগীদের সুরক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহার করে ডিউটি করছি। এক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও ঝুঁকির মধ্যে আছি এবং রোগীরাও ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী পেলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি উৎসাহিত হব।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণে কোভিড-নাইনটিন ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিটের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে। সাড়ে চার বছরে পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে করোনা এখন নতুন ভেরিয়েন্টে ষষ্ঠ ধাপে প্রবেশ করেছে, তবে এখনো শেষ হয়নি আইসিইউ ইউনিটের কাজ। অথচ হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশ পথেই টাঙিয়ে রাখা হয়েছে আইসিইউ সেবার সাইনবোর্ড। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

শাহরিয়ার কবির জনি নামের এক রোগী বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আইসিইউয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের প্রবেশপথে আইসিইউ সেবার যে সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। এখানে ক্রিটিক্যাল কোনো রোগী এলে বা কোনো রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে তাকে ফরিদপুর অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। ফরিদপুর ও ঢাকা নিতে নিতেই রোগী মারা যায়। আমাদের দাবি দ্রুত এই হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু করা হোক।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জিয়াউল হাসান বলেন, করোনা মোকাবিলায় হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। হাসপাতালে করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট কিট না থাকায় করোনা পরীক্ষা করা যাচ্ছেনা। তবে উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর আইসিউ ইউনিটের কাজ গণপূর্ত বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। কাজ শেষ হলে তারা আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।

সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য ৩০ হাজার কিটের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিট পেলে করোনা পরীক্ষা শুরু হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমাদের সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে।জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। তাহলে আমরা করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে পারব।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্কের ছোবল ঠেকাতে গম-উড়োজাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের Jun 27, 2025
img
মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক আটক Jun 27, 2025
img
বলিউডে তারকার নামেই সিনেমার ভাগ্য নির্ধারিত! Jun 27, 2025
img
টেকনাফে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ মাদক কারবারি আটক Jun 27, 2025
img
পাখির ধাক্কায় জরুরি অবতরণ, বিকল্প ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর গেল যাত্রীরা Jun 27, 2025
img
৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ চান জামায়াত আমির Jun 27, 2025
img
ইরানে মার্কিন হামলার নতুন তথ্য প্রকাশ পেন্টাগনের Jun 27, 2025
img
কলম্বোতে বিপাকে শান্তরা, শ্রীলঙ্কায় গেল ওয়ানডে দল Jun 27, 2025
img
বিএনপি দখলবাজি-চাঁদাবাজির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না : আযম খান Jun 27, 2025
উল্টো পথে ট্রাক, আটক করলো সেনাবাহিনী Jun 27, 2025
img
গোপনে সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সাকিব আল হাসান Jun 27, 2025
img
ফরিদপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে নারীসহ আটক ১৫ জন Jun 27, 2025
img
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের নতুন কমিটি Jun 27, 2025
বাংলাদেশি কূটনীতিকের বাসা গুঁড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা দাবিতে বিব্রত ঢাকা Jun 27, 2025
নামাজ পড়লে যে ৬টি পুরস্কার পাবেন | ইসলামিক টিপস Jun 27, 2025
img
আমরা কোনো অবিচার চাই না: জামায়াত আমির Jun 27, 2025
সাদিয়া আর সৌম্য ছাড়া কাজ করা খুব কঠিন হতো: উৎসবের কাস্টিং ডিরেক্টর Jun 27, 2025
স্থানীয় নির্বাচন আগে জরুরি: মন্তব্য নুরের Jun 27, 2025
img
উন্মোচিত হলো লাল হীরা ‘উইনস্টন রেড’ Jun 27, 2025
img
উত্তেজনার পর বিরল খনিজ নিয়ে চুক্তিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র Jun 27, 2025