ভারতীয় সিনেমায় এমন কিছু মুখ আছে, যাদের জনপ্রিয়তা আসে গ্ল্যামার বা বিতর্ক থেকে নয় — আসে নীরব দৃঢ়তা ও অভিনয়ের আন্তরিকতা থেকে। আর. মাধবন তেমনই একজন। ‘Kesari: Chapter 2’ ও ‘Aap Jaisa Koi’-এর মতো নতুন ছবিতে তিনি শুধু অভিনয় করছেন না, বরং নিজের জীবনদর্শনের প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন চরিত্রে চরিত্রে।
সম্প্রতি এক খোলামেলা আড্ডায় মাধবন জানিয়েছেন, তিনি কোনোদিনই তারকা হতে চাননি। তাঁর ভাষায়, “আমি কখনো স্টারডমের পেছনে দৌড়াইনি। কেউ আমাকে চিনলে ভালো, না চিনলেও চলবে। বরং যারা আমাকে চিনে না, তাদের সঙ্গেই কথা বলে আমি অভিনয়টা আরও ভালোভাবে বুঝি।”
এই কথাতেই যেন ফুটে ওঠে এক ‘অচেনা শ্রোতা’ হওয়ার লোভ।
নতুন সিনেমা ‘Kesari: Chapter 2’-তে তিনি এক জটিল, ধূসর চরিত্রে অভিনয় করছেন। চরিত্রটি একদিকে ব্রিটিশদের পক্ষেও নয়, আবার সরাসরি ভিলেনও নয়। বরং তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশ ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতাই তাকে পথে নামিয়েছে। মাধবনের মতে, “এই চরিত্র আগেও ১০৭ বার করেছে। ফলে ওর কাছে ভয় বলে কিছু নেই।”
এ যেন ভয়ের স্তর ভেঙে মনস্তত্ত্বের গভীরে যাওয়া।
তাঁর ক্যারিয়ারে অনেক প্রথম বা নতুন পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন — যা আজকের দিনে এক সাহসী সিদ্ধান্ত। মাধবন বলেন, “আমার ব্লকবাস্টার ছবিগুলোর বেশিরভাগই এসেছে নতুনদের হাত ধরে। The Railway Men হোক বা Kesari 2 — প্রতিটি প্রকল্পই এক নবীন দৃষ্টিভঙ্গির ফল।”
‘Aap Jaisa Koi’-তে মাধবন অভিনয় করছেন এক ৫৫ বছর বয়সী পুরুষের চরিত্রে, যার প্রেম এক তরুণীর সঙ্গে — কিন্তু সিনেমা কখনোই সেই সম্পর্ককে ‘নায়কগিরি’ দিয়ে সাজাতে চায় না। বরং এটি এক নিঃশব্দ বাস্তবতার গল্প, যেখানে ভালোবাসা আছে, কিন্তু কোনো কৃত্রিম রোম্যান্স নেই।
ব্র্যান্ড, ইভেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়ার চেনা চক্র থেকে দূরে থাকলেও মাধবন রয়ে গেছেন ব্র্যান্ডের ‘বিশ্বাসযোগ্য মুখ’। তিনি বলেন, “আমার PR দলই আমার ওপর বিরক্ত। আমি ফটোশুট করি না, পোজ দিই না, তবুও ব্র্যান্ডরা চায় — কারণ তারা জানে, আমি যেটা করি, বিশ্বাস থেকে করি।”
সম্প্রতি ‘RHTDM’ সিনেমার পুনঃপ্রদর্শনের পর মাধবনের নিজের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে ‘Ramji Londonwaley’, ‘Alai Payuthey’-এর মতো ছবি। যেন সময়ের পরতে পরতে তিনি ফিরে দেখতে চান নিজের অভিনেতা-রূপটিকে।
শেষমেশ মাধবনের এই পথচলা এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা যায় — আত্মবিশ্বাস ও বিবর্তনের যাত্রা। তিনি আলোতে দাঁড়াতে চান না, বরং নিজের আলো দিয়ে অন্যকে আলোকিত করতে চান।
এসএন