২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তেলেগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি, যাকে সবাই টলিউড নামে চেনে, পার করেছে এক রোলার কোস্টার যাত্রা। নতুন বছর শুরুর পর থেকেই বক্স অফিসে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কোনো ছবি আশার আলো দেখিয়েছে, আবার কোনো ছবি হয়েছে চরম ব্যর্থ। তবে মোটের উপর দর্শকপ্রিয়তার নিরিখে এই সময়টাকে বলা যায় চমক ও অনিশ্চয়তার গল্প।
শুরুর দিকেই বড় হিট এনে দিয়েছিল ‘সঙ্ক্রান্তিকি ভস্তুনাম’। ভেঙ্কটেশ ও অনিল রাভিপুড়ির যুগলবন্দি দর্শকের হৃদয় জয় করে নেয়। প্রায় ৩০০ কোটি রুপির আয় করে বছরের অন্যতম সেরা সাফল্য হয়ে ওঠে সিনেমাটি। ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া ‘থান্ডেল’ ১০০ কোটির ক্লাবে পৌঁছে প্রমাণ করে, মাঝারি বাজেটের সিনেমাও দর্শকের ভালোবাসা পেতে পারে।
তবে বছরের মাঝামাঝি এসে দেখা দেয় অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। বহুল আলোচিত ও উচ্চ বাজেটের ‘গেম চেঞ্জার’ বিশাল প্রত্যাশা তৈরি করেও মুখ থুবড়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ গেল জলে। অন্যদিকে ‘জ্যাক’, ‘ওডেলা ২’, ‘অর্জুন: সন অব বৈজয়ন্তি’, ‘ভৈরবম’ বা ‘ষষ্ঠিপূর্তি’-র মতো ছবিগুলোর খবর দর্শক রাখেনইনি।
তবে সব ব্যর্থতার মাঝেও কয়েকটি ছবি বাঁচিয়ে দিয়েছে টলিউডের সম্মান। মার্চে মুক্তি পাওয়া ‘কোর্ট’ ছিল একেবারে বাজেটের দিক থেকে ক্ষুদ্র, কিন্তু মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে প্রশংসা। ‘ম্যাড স্কয়ার’ নামের কমেডি সিকুয়েলও লাভের মুখ দেখেছে। মে মাসের ‘সিঙ্গল’ সিনেমাটি ধীর গতিতে হলেও কিছুটা প্রাণ এনে দিয়েছিল বক্স অফিসে।
অন্যদিকে জুনে মুক্তি পাওয়া ‘কুবেরা’ একেবারে নীরবে ১০০ কোটির গণ্ডি পার করে দেয় এক মিষ্টি চমক। ‘সুভম’-এ প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটালেও সামান্থা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। হাইপ থাকলেও ‘হিট ৩’ প্রথম সপ্তাহেই মুখ থুবড়ে পড়ে।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, পুরো এপ্রিল মাস ছিল একেবারে ফাঁকা। জুনের শুরুতেও তেমন কোনো বড় রিলিজ আসেনি। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে এই নীরবতা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটররাও এখন অনেক বেশি হিসাব কষে এগোচ্ছেন।
তবে আশার কথা, দ্বিতীয়ার্ধে অপেক্ষা করছে বিশাল বাজেটের একাধিক মেগা প্রজেক্ট। ‘থাম্মুডু’, ‘ওয়ার ২’, ‘ডন ৩’-র মতো সিনেমা ইতোমধ্যেই আলোচনায়। ইন্ডাস্ট্রির ভরসা—এই ছবি গুলোর মধ্যে অন্তত কিছু বক্স অফিসে ফের উত্তাপ আনবে।
সব মিলিয়ে ২০২৫-এর প্রথমার্ধ ছিল এক অদ্ভুত দ্বৈততার ছবি। দর্শকের রুচির বদল, কনটেন্টের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং ওটিটির চ্যালেঞ্জের যুগে সাহসী ও নতুন গল্প না থাকলে আর কিছুতেই পুরোনো কায়দায় কাজ হবে না—এই শিক্ষা এবার টলিউড ভালভাবেই পেয়ে গেছে।
এসএন