সাফল্য বলিউডে চটজলদি আসে, কিন্তু টিকিয়ে রাখা যায় কজন? কখনও ভীষণ হাইপ, কখনও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স—প্রথম দিকে যাঁদের ঘিরে ছিল বিরাট প্রত্যাশা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেকেই হারিয়ে গেছেন সিনে পর্দা থেকে। কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, কিছু ব্যক্তিগত সংকট, আর কিছু ক্ষেত্রে বলিউডের নির্মম রাজনীতি মিলিয়ে তাঁরা হারিয়ে যান লাইমলাইটের আড়ালে।
‘জানে তু বা জানে না’ ছবির সেই প্রাণোচ্ছল ছেলে প্রতীক বাব্বর, যাঁর জন্য একসময় বলিউড ছিল হাতের মুঠোয়, তিনিই পরে আসক্তির জালে জড়িয়ে পড়েন। একের পর এক সম্ভাবনার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এখন কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাঁকে দেখা গেলেও, মূলধারার সিনেমায় তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটেনি।
‘তারে জমিন পর’-এর দার্শীল সাফারির নামও এই তালিকায়। শিশু শিল্পী হিসেবে তিনি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে ওঠেন। কিন্তু তারপর পড়াশোনার জন্য বিরতি নিতে হয় তাঁকে। ফিরে এসে পাননি সেই আগের মতো চরিত্র কিংবা প্রযোজক-পরিচালকের আগ্রহ।
একইভাবে কেদারনাথ-এর সারা আলি খানও প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন। তাঁকে বলা হচ্ছিল ‘নেক্সট বিগ থিং’। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল স্ক্রিপ্ট, অনিয়মিত অভিনয় আর অতিরিক্ত পিআর নির্ভরতায় তিনি হারিয়ে ফেলেন নিজের বিশেষত্ব।
এই তালিকায় আরও আছেন ইমরান খান—‘জানে তু’ এবং ‘আই হেট লাভ স্টোরিজ’-এর মতো ছবিতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন টিনেজ প্রেমিকদের স্বপ্ন, এখন পুরোদমে অভিনয় থেকে বিচ্ছিন্ন।
আমিশা প্যাটেল—‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ও ‘গদর’-এর পর একেবারে অন্তরালে।
ওমি বৈদ্য—‘থ্রি ইডিয়টস’-এর সেই ভাইরাস-ভীত হাসির চরিত্র, যাঁকে আর কোন দিনই সেই পরিসরে দেখা যায়নি।
অর্জুন কাপুর, পরিণীতি চোপড়া, বরুণ ধাওয়ান—তাঁদের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল বিস্ফোরকভাবে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একঘেয়ে চরিত্র আর স্ক্রিপ্ট ক্লান্তি তাঁদের আটকে দেয়।
‘গুল্লি বয়’-এ চোখ ধাঁধানো আত্মপ্রকাশ করা সিদ্ধান্ত চতুর্বেদীও এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাননি তাঁর দ্বিতীয় বড় হিট।
এইসব মুখগুলোর পেছনে ব্যর্থতার গল্পটা কোথায়?
প্রথমত, স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ের দুর্বলতা। কখনও কখনও ভুল সময়ে ভুল ছবির সঙ্গে যুক্ত হওয়া তাদের কেরিয়ারে বড় ধাক্কা দেয়। দ্বিতীয়ত, টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়া। বলিউড এখনও অনেকাংশে নিরাপদ পথে হাঁটে—একবার কেউ সফল কোনও চরিত্রে অভিনয় করলে, তাঁকে বারবার একই ধাঁচে কাস্ট করা হয়, যার ফলে অভিনয়ের পরিসর সংকুচিত হয়ে যায়।
অনেক সময় ব্যক্তিগত জীবন বা মানসিক দ্বন্দ্বও কেরিয়ারের ছন্দপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কখনও হাইপ দিয়ে শুরু হলেও সেই হাইপকে শক্ত ভিত হিসেবে গড়ে তুলতে না পারায় হারিয়ে যেতে হয় শিরোনাম থেকে।
বলিউডে প্রতিভা থাকলেই যে চলবে না, দরকার তার ধারাবাহিক চর্চা ও কৌশলী কেরিয়ার পরিকল্পনা—এই নামগুলো সেই কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়।
এসএন