জামায়াতের সঙ্গে জোট হয়নি, পিআর পদ্ধতি চায় গণঅধিকার

নির্বাচনী জোট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরকে ‘অসমর্থিত’ বলে দাবি করেছে গণ অধিকার পরিষদ। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দলটির নির্বাচনী জোট চূড়ান্ত হয়েছে-এমন সংবাদ নাকচ করে দিয়ে দলটির মুখপাত্র ও ঠাকুরগাঁও-২ আসনের প্রার্থী ফারুক হাসান বলেছেন, কোনো দলের সঙ্গেই এখনো জোট চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে এবং আলোচনা চলছে।

একই সঙ্গে দেশের বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয়-উভয় পদ্ধতির সরকারব্যবব্যবস্থা দেশে বারবার ‘ফ্যাসিবাদ’ তৈরি করেছে। তাই আগামীতে একদলীয় স্বৈরশাসন রোধ করতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা ১২টায় ঠাকুরগাঁও শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি আগামী নির্বাচন, জোটের রাজনীতি, দেশের শাসনব্যবস্থা এবং স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের নির্বাচনী জোট গঠনের খবর প্রকাশিত হয়। এই খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফারুক হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আসলে এমন নয়। গত পরশুদিন জামায়াতে ইসলামীর সাথে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। এরপর কয়েকটি গণমাধ্যম নির্বাচনী জোট গঠনের নিউজ করেছে।
কিন্তু এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে কারও সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা। নির্বাচনী জোট, মহাজোট-এটি নিয়ে আমরা এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। নির্বাচনী জোট কবে হবে, তা তফসিল ঘোষণার পরেই গণ অধিকার পরিষদ চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।’

তিনি মনে করেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ রাখা যাবে না।

গণ অধিকার পরিষদ কেন সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন চাইছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয়-দুটি সরকারব্যবস্থাই দেখেছি। কিন্তু কোনোটিই জনগণের কল্যাণ আনতে পারেনি। বারবার দেশ ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছে। এজন্য আমাদের এখন নতুন মডেল লাগবে, যে সিস্টেমের মাধ্যমে আগামীতে আর কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না।’

তার মতে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ফলে কারও মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব তৈরির সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘যখন একজন ব্যক্তি একচ্ছত্র ক্ষমতা পেয়ে যায়, তখন তার মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব তৈরি হয়। পিআর সিস্টেমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বা সমবণ্টন হবে। এতে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

পিআর সিস্টেমের ফলে ‘দুর্বল সরকার’ গঠিত হবে-এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারগুলো তো একটি দেশের পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছিল। ভারতের প্রেসক্রিপশনে তারা দেশ চালিয়েছে। সেই পুতুল সরকারের চেয়ে কিছুটা দুর্বল কিন্তু দেশপ্রেমিক সরকার অনেক ভালো। আমাদের লক্ষ্য হলো, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা দেশপ্রেম নিয়ে দেশ চালাবে।’

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সমস্যা নিয়েও কথা বলেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলছে এবং চলবে। মাদক কারবারির সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, সে যত বড় রাজনৈতিক দলের সদস্যই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।’

একই সঙ্গে দেশব্যাপী অনলাইন জুয়া ও ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামের সাধারণ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও এর অনেক ফাংশন সম্পর্কে অজ্ঞ। এই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারকে এসব বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।’

ভবিষ্যতের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঝুঁকি নিয়েও কথা বলেন তিনি। ফারুক হাসান বলেন, ‘এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও বা তথ্য ছড়িয়ে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষ সহজেই এসব ভুয়া তথ্য বিশ্বাস করে ফেলতে পারে। সরকারকে এখনই সোশ্যাল মিডিয়া কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।’

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এশিয়া কাপ জিতেনি বাংলাদেশ গুগোল করে নিশ্চিত হলেন ট্রট Sep 16, 2025
img
ড. ইউনূস ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য উমামার লিখিত আবেদন Sep 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন, তাহলে নির্বাচন বর্জনের দরকার হবে না Sep 16, 2025
img
আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Sep 16, 2025
img
আগস্টে ৪৯ মামলায় জড়িত ৩১১ দুর্নীতিবাজ Sep 15, 2025
img
১৫ কেজির কোরাল মাছ বিক্রি ১৮ হাজারে Sep 15, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সামনে হংকংয়ের ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জ Sep 15, 2025
img
নিকুঞ্জে নাগরিক জাগরণ: হারানো শান্তি ফিরে পাওয়ার গল্প Sep 15, 2025
img
সুপার ফোরে খেলবে বাংলাদেশ, আত্মবিশ্বাসী কোচ Sep 15, 2025
img
ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রশংসায় জনাথন ট্রট Sep 15, 2025
img
অসুস্থ অমিতাভকে ২০০ জন ৬০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলেন Sep 15, 2025
img
অতিরিক্ত ৬ বছরের কারাভোগ শেষে ভারতে ফিরলেন রামাতা Sep 15, 2025
এশিয়া কাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, সুপার ফোর নিশ্চিত কার? Sep 15, 2025
img
আলোচনা ভেস্তে দিতেই দোহায় হামলা : কাতারি আমির Sep 15, 2025
img
তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহী চীন, পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল Sep 15, 2025
img
ভাঙ্গায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, ক্ষতিগ্রস্ত ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল Sep 15, 2025
img

কাতারে হামলা

নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী Sep 15, 2025
img
দেশবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন : জামায়াত সেক্রেটারি Sep 15, 2025
img
লেভেল ফোর কোচিং শেষ করলেন মঞ্জু Sep 15, 2025