জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র হলে নাকি সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে না। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছে, যারা শহীদ হয়েছে, তাদের মর্যাদা, তাদের স্বীকৃতি, যারা আহত হয়েছে তাদের রাজনৈতিক নিরাপত্তার কথা থাকতে হবে এই বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে।'
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দিনাজপুরের অনেক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিটি করর্পোরেশনের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আমি যে রাস্তায় পদযাত্রা করলাম সেটি এমন একটি রাস্তা, যে রাস্তায় বারবার পড়ে যেতে হয়েছে। এত ঐতিহ্যবাহী এত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ একটা শহর এমন হতে পারে এটা অকল্পনীয়। আমরা পুরোনো রাজনীতিবিদদের মত আশ্বাস দিয়ে যাব না, আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছি এবারও আমরা সফল হব ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘এনসিপি আগামী ৩রা আগস্ট শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র সংগ্রহের দাবিতে গত বছরের মত বিশাল জমায়েত করবে এবং আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বুঝে নেব।
আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতেই হবে, জাতীয় নাগরিক পার্টির হাতেই হবে।’
জুলাই আন্দোলনের পর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হতে যাচ্ছে। এক বছরে আমাদের স্বপ্ন ছিল অনেক। আশা ছিল অনেক, আমরা বলেছিলাম দেশ পরিবর্তিত হবে, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ স্বপ্ন নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, দিনাজপুরের মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল তা পূরণ হবে। দুঃখের বিষয় সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল নতুন কাঠামোর জন্য, নতুন রাষ্ট্রের জন্য নতুন দেশের জন্য, একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর জন্য নয়। আমরা সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছি।’
দিনাজপুরের কৃষকদের দুর্দশা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দিনাজপুরের মাটি ইতিহাসের সাক্ষী। ব্রিটিশ আমলের নীল বিদ্রোহ থেকে ২৪ এর গণ গণঅভ্যুত্থান সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দিনাজপুর খাদ্য শস্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী। যে কৃষক ধান উৎপাদন করে সেই কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পায়না, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য কৃষক ধানের মূল্য পায়না।
দুর্নীতির কারণে কৃষক তাদের ন্যায্যমূল্য পায়না , অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যেই দিনাজপুরের মানুষ সারা দেশের মানুষকে খাওয়ানোর সক্ষমতা রাখে, সেই দিনাজপুরের কৃষকেরা তাদের নিজেদের ছাওয়ালদের খাওয়াতে পারেনা। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনা যে দিনাজপুর উৎপাদন করবে ঢাকা ভোগ করবে। এই বৈষম্যের দেশ আমরা চাইনা। আমরা চাই যেখানে উৎপাদন হবে সেখানে সুষম বণ্টন হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিদায় করতে চাই।’
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা তাসনীম জারা, হান্নান মাসউদ আব্দুল্লাহ, ডা. আহাদ উদ্দিনসহ প্রমুখ।
এমআর